সিরাজকা আজ সক্কাল সক্কাল উঠে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কাল রাতে পানি ভালোই হয়েছে। অনেকদিন বাদে চারদিক জলে টইটুম্বুর। ধান সবে এই শ্রাবণের শেষে রোয়া হল। তার আগে জল নেই। ছেঁচে, পাম্প চালিয়ে কি কান্ড। আর এই দিন চারেক যেতে না যেতেই....ধান গাছ ডুবুডুবু।
আজ গোজোর কাজে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই । কালকের রাত অবদি খেটেছে। দুপুরে বালির গাড়িতে ছিল। এই টিপ টিপ পানির মধ্যে নদীর ধার থেকে বালি নৌকা থেকে ছোট হাতি গাড়ি ভর্তি করে নিয়ে গোপালপুর হাট। মাল আনলোড করে ভেবেছিল ঘরে গিয়ে ভাত খেয়ে ঘুমোবে। তা মালিক বললে- তুই ড্রাইভারের সাথে মল্লিকপুর গিয়ে কাটা ম্যাচটা নিয়ে আসবি দশ কেজি। তাও বেলা বেলি গেলে হবে না। সাড়ে আটটার দিকে যাওয়ার অর্ডার। সে করে ঘরে ফিরতে ১০টা। আর সারাদিন ভেজা বালি বয়ে গায়ে হাত পায়ে যেন দরদ। রাতে একটা প্যারাসিটামল মেরেই শুয়েছিল।
কালকের বাড়ি ফিরে চৌকির উপর তিনদিনের আগে পাতা বিছনাটা একটু টানটান করে ভিজে স্যাঁৎস্যাতে ঘেমো গন্ধর সাথে নিজের পরনের স্যাঁৎস্যাতে জামাটা ছুঁড়ে কোন রকমে বডিটা ফেলে দিতেই ঘুমিয়ে পড়ে। বাপ ত ঘরে নেই । কোন চুল্লুর ঠেকে হয়ত রয়েছে। মা খাবার জন্য ডাল, ভাত আর আলু চোখা নিয়ে আসার আগেই ঘুমিয়ে যায়।
আজ কাজে যেতেই ইচ্ছে করছে না। সকাল থেকে আকাশটাও যেন গোমরামুখো উলুঝুলু হয়ে আছে। ময়চেনের সাথে সেদিন খেলার মাঠে দেখা হয়েছিল। গোজো , ময়চেন সব স্যাঙাত। ময়চেনের বাপ আরবে গিয়ে পয়সা করি পাঠ্ঠে দেয়। তাতেই ওদের দেমাক। যার যা নসিবে আছে তাই ঘটবে। এতো আর খন্ডানো যায় না। ময়চেন সেদিন বলেছিল, একদিন স্কুলের দিকে আয়। ও নতুন কেলাসে উঠেছে। ওদের কেলাসে অনেক মেয়ে পড়ে। গোজোর যেতে ভারি লজ্জা করে। সেই কবে পড়া ছেড়ে দেছে। কেলাস ছেড়ে গেলে সে দোস্তি আর থাকে না।
... তবুও কোথায় যেন গোজোর মনটা টানে। মাঝে হাতি গাড়ির কাজ ছেড়ে দে, কদিন জোগাড়ে কাজ ধরেছিল। তা রোজ খারাপ না, কন্ট্রাক্টরকে দে-থুয়ে হাতে ২৭০টাকা ডেইলি-- তবে ঐ রোদে জলে ভিজে কাজ করতে হয় রোজ। সেদিন কি ভেবে ফেরার পথে স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়েই স্কুল থেকে পাওয়া সবুজ সাথীর সাইকেলটা করে বাড়ি ফিরছিল। ধানকলের মোড়ে বাঁক নিতেই ছেলে-মেয়েদের একটা হইচই দেখে স্লো করে সাইকেল। দেখে ধানকলের উল্টোদিকের বাড়ির দাওয়াতে কেক এর উপর মোমবাতি জ্বালানো, আর কেকের উপর গোলাপের পাপড়ি, ঠিক রিয়ার লাল ঠোঁটের মত। মনটা সেই থেকে গোজোর বড় উচাটন হয়ে আছে। রিয়ার সাথে সেই কেলাস ফাইভ থেকে চেনা।
.. আজ ঘুম ছেড়েছে কিন্তু বিছনা যেন ছাড়তে ইচ্ছে করছে না, আবার শুয়ে থাকতেও ইচ্ছে করছে না। এর মধ্যে দরমার ফাঁক দে সিরাজকা'র ডাক কানে আসে- ও গোজো উঠলি নাকি? গোজো সাড়া দেয় না। জানে কী জন্য এত ডাক। গতকাল জামাতের লোকজনকে খাইয়ে দাইয়ে এসে রাতেও গোজোর একবার খোঁজ নিয়ে গেছে। সিরাজকা এক ডাক্তারের বাড়ি রং-এর কাজ ধরেছে। রুবির পেছনে। আঠাশতলার ফ্ল্যাটে। লেবার দরকার। বলেছে ৪০০টাকা রোজ। কিন্তু, আজ যেতে ইচ্ছে নেই। না, ঘরে থাকলে চলবে নে। গোজো বিছনা ছেড়ে উঠে পরে। মা কোথায় গেছে বুঝতে পারে নে। দেখে রান্নাঘরে ছিটেবেড়ার ফাঁক দিয়ে সানকির উপর একফালি সূর্যের আলো এসে পড়েছে। সানকি তুলতেই তলায় রাখা বাটিতে কালকের রাতের পান্তা ভাত আর আলুর চপ, দুটো কাঁচা লংকা বেরিয়ে আসে। তাড়াতাড়ি চোখে মুখে জল দিয়েই মানিকজোড় পাউডার দিয়ে দাঁত মেজে কোনোরকমে মাটিতে বসেই কোলে বাটি নিয়ে হুসহাস করে চাট্টি পান্তা, চপ দিয়ে সাঁটিয়েই একটা নাইলন ব্যাগ নে ঘরের বাইরে আসে। একটু এগুতেই দেখে সমুখের চা দোকানে হুলো বসে আছে। হুলোর কাছে দিন কয়েক আগে গোটা ৫০টাকা ধার ছিল। মাল খাওয়ার তরে । হুলো হাঁক পারে-- কিরে,আয় চা খাবিনি?
গোজো খুব ব্যস্ততা দেখায়-- আজ হবে নে। আমড়াগুলো কেওতলা হাট থেকে গস্ত করতে হবে। স্কুল ধরব আজ।
হুলো বলে- হ্যাঁ, হাটে তোর তরে আমড়া নে বসে আছে।
গোজো কোন কথা না বাড়িয়ে হাঁটা লাগায়। সত্যেন মন্ডলদের বাড়ির পিছনে খিড়কি সাইডে জঙ্গলের মধ্যে একটা আমড়া গাছে গোটা কুড়ি আমড়া আছে পরশু দেখে এসেছে। ঐ কটা পেড়ে , পার পিস পাঁচ্ টাকা করে হলেও ১০০ টাকা। মেন রোডে সাইকেল নে উঠতেই দেখে, মা একটা পাটভাঙা শাড়ি পরে হাতে সাজাহানের দোকান থেকে চৈত্রে কেনা নোকিয়ার সেটের সাথে দেওয়া সস্তার হাত ব্যাগ নে দেইড়ে আছে।
মায়ের চোখের দিকে চোখ পড়তেই বলে-- আজ কাজে যাবুনি বাপ। তলপেটের ব্যাথাটা বেরেচে। একবার ডাক্তারকে দেক্কে আসি।
ডাক্তার বিশ্বাস সম্বন্ধে কেউ কেউ বলে-চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। আবার কেউ বলে-শালা হারামির হাতবাক্স। তবে, কেতলা হাট চত্বর থেকে শুরু করে ডাক্তার বোসের নার্সিংহোম পর্যন্ত, সেই ডায়মন্ড অবদি, সব্বাই ওনাকে একডাকে চেনে। ওষুধের দোকানে বল, বিশ্বাসের প্রেসক্রিপশন দোকানে দেখালে সব ওষুধও ঠিক ঠাক মেলে। রুগীদের সাথে সব সময় মা ছাড়া উনি কথা বলেন না(গাইনি ডাক্তার)। আর হিঁদু বল, মোল্লা বল সব ডেলিভারী কেস এ তল্লাটে ওনার হাত যশ। হিঁদুদের জন্য শুভদিন শুভক্ষণ দেখে সিজার করার ব্যবস্থাও রয়েছে প্যাকেজের মধ্যে। মোল্লাদের জন্য শুক্কুরবার বা নবী দিবস বা যাতে নেকি বাড়ে, সেরকম ক্ষণ দেখে ডেলিভারী করান। এমনকি হরবখত ডেলিভারী কেস গুলি হাজার পাঁচেক। আর স্পেশাল কেস গুলি হাজার দুই বেশি। আবার ১৫ থেকে ১৮ হাজারের প্যাকেজও আছে। মায়েরা বেবি সহ সাতদিন থাকতে পারবেন। সাথে প্রতিমা মাসি। ডেইলি ২৫০। একসাথে চারটে মায়ের দিকে খেয়াল রাখবে। কেবিন নিলে এক্সট্রা তিন হাজার। এতে, পোস্ট সিজারিয়ান মেডিসিন আর অ্যান্টিবায়োটিক দেবে।
ডাক্তার বাবু খুব ধর্মপ্রাণ নিষ্ঠাবান মানুষ।মাসান্তে একহাজার করে মঠ -মিশনে দুস্থ দরিদ্র বাচ্চাদের জন্য দান করেন। নিজের ছোটবেলার প্রবল কষ্টের কথা কখন ভোলেন না। ডাক্তার বাবুর পুরানো বাড়ি এদিকেই। রুগীদের বলেনও সেকথা। আশ্বাস দেন, কোন চিন্তা নেই। আশপাশের ক্লাব বা কোথাও কোন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করলে যেতে না পারলেও নিয়ম করে চাঁদাটা ঠিক পাঠিয়ে দেন। মাঝে মধ্যে একটা দুটো কেস চাপের মুখে একটু গড়বড় হলে ওদের দিয়ে সাল্টে নেন (যদি দরকার হয়)। এই গত বছর একটা পেশেন্ট পোয়াতি ছিল। খুব ব্লিডিং হচ্ছিল। তার ব্লাড দেওয়ার পর বাচ্চাটার অবস্থা দেখার জন্য লোয়ার অ্যাবডোমেন ইউ এস জি করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় বেড শিফট করাতে গিয়ে একটু পড়ে যায়। তখন ঐ লোকাল লোকরা যা করে আর কি, তার পর ইল্লিটারেট অন্য বর্ণের .... অন্য দেশ হলে..এদেশে ডাক্তারদের কোনো নিরাপত্তা নেই...যা হোক ঐ এসপি-র বৌ ডাক্তারের ক্লায়েন্ট, তারপর লোকাল পঞ্চায়েত সদস্যাকে চিকিৎসা করা..এই চেনা জানার সুত্রে ম্যানেজ হোলো....এই সব করে লাখ পাঁচেক গচ্চাও গেল। কিন্তু তাতে, অন্য একটা বাঁশ ঢুকল।
এসপি সাহেবের ওশিয়ানিয়া টাওয়ারে একটা ফ্ল্যাট বুক করার খুব ইচ্ছে। কিন্তু, জাজোরিয়া কনস্ট্রাকশনের মালিক তের কোটি প্রাইস ট্যাগ রেখেছে। হ্যা, অবশ্যি ভেতরে ২০ তলায় একটা হ্যাঙ্গিং গার্ডেন আছে। জগিং ট্রাক আছে। তাতে এক একটা ইন্দোনেশিয়ান পাল্ম ট্রি দশ হাজার করে। পার ফ্ল্যাট দুটো করে অমন ট্রি ফ্রী দিচ্ছে।অই দুটি ট্রির মাঝে দুজনের বসার দোলনা। এস পি সাহেবের বড় হয়ে ইস্তক একটা ইচ্ছে আছে। রাধা-কেষ্টর মত দোল খাবেন, একান্তে,দুজনে। রাধা ত পয়সা দিলেই রেডি, কিন্তু, দোল ত যেখানে সেখানে...... ফ্ল্যাট থেকে লিফ্ট ডাইরেক্ট গার্ড়েন। এমন সিস্টেম। নো পলিউশন। গার্ডেনের চারপাশ গ্রিন নেট দিয়ে ঘেরা, মানুষ সমান আর তার উপর মুক্ত আকাশ। মুক্তকেশীকে ইচ্ছে আছে একবার.... আর ডাক্তার বাবুর ওই মঠের স্বামীজিকে এনে সারাদিন রাখবেন। কিন্তু, ঐ দামটা নিয়ে ...তবে জাজোরিয়াদের সামালীর জমিতে স্কুল করার সময় জমি নিয়ে যে জটিলতা হয়েছিল তখন এস পি সাহেব হেল্প করেছিলেন। সেকথা মনে রেখেই জাজোরিয়ারা বলেছে, দুটো ফ্ল্যাট বুক করলে সাড়ে এগার কোটিতে ছেড়ে দেবে।
যাক গে অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হয়েছে ডাক্তার সাহেবকে। হাজার হোক এস পি সাহেবের কথা। অবশ্য এটাও ইনভেস্টমেন্ট। আজকাল দেশের যা টালমাটাল অবস্থা, ব্যাংকে ভরসা না করাই ভালো। এমনিতে, কিছুদিন আগেই ভাবছিলেন যে একটা ইনভেস্ট করবেন। তবে বৌটা বাড়িতে বড্ড ক্যাচ ক্যাচ করে। সেদিনই বলছিল-- দেশের জায়গা পড়ে আছে। মার্লিন সিটির ফ্ল্যাটটা ভাড়া দিয়েছ। ঠিক আছে। আমরা বেনেপুকুরের এই ফ্ল্যাটে কলকাতায় ভালোই আছি। তা সত্ত্বেও আরেকটা কেন? মেয়েটা বড় হচ্ছে, বাইরে পড়তে যাবে, তার জন্য রাখ কিছু। তারপর ছেলেটাকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছ, সেটার ভবিষ্যৎ.....
ডাক্তার বলেছেন-আরে এখন সাড়ে এগারো, ক'বছর বাদে রিসেল করলে ১৪/১৫ আসবে। ওখান থেকেই ত.....
সায়নী তাতে ঠিক সন্তুষ্ট হয়নি,বলে-- ঠিক আছে.....মনে মনে ভাবে কয়েক বছর আগে অই সেই পেডিয়াট্রিক ডাক্তারটা,শুভদীপ না কি যেন না, মাঝরাতে পাইপ বেয়ে পালাতে গিয়েই ত মারা পড়ল। হাজব্যান্ড সারাদিন বাইরে বাইরে থাকে, মনে ভয় হয়, অনলাইনের নানান ফাঁদ...
গোজোর মা, কে'তলা হাটে কোলে মেডিকেলে গিয়ে নাম লেখায়। ২২জনের মাথায় নাম। ডাক্তারের ফি ৩০০/-, গোজোর মার ক্যাচড়ায় একটা ওভারটাইমের ডিউটির সমান। ডাক্তারকে দেখাতে ঢুকে পাথর-লাগানো চকচকে মেঝেতে পায়ের বুড়ো আঙুল চেপে, সানমাইকা-লাগানো দরজার ডোর-নবে হাত রাখে। ভয় করে, টাকার কথাটা বলবে কি বলবে না। ফিলিপসের লেড-লাইট বার্জার পেইন্ট লাগানো দেওয়াল থেকে ঠিকরোয়। ডাক্তার বলে-- মা, তোমার বাচ্চার জায়গায় টিউমার, ওটা কেটে পরিষ্কার করতে হবে। এখানে করালে, ৩৫,০০০-এর মত পড়বে ওষুধ-পালা নিয়ে। তোমরা আমার দেশের লোক, বেশী নোব না।
গোজোর মা, ডাক্তারের ব্যাভারে খুশি হয়ে বলে-- কিন্তু, বাবু, সমিস্যেটা হোলো, ছেলের বাপ ত কাজ করে নে,আর আমার উপর ভরসা...
--চিন্তা কি মা, কমে করে দোব, পিজিতে আউটডোরে দেখাও আমাকে.....
গোজোর মা দেখিয়ে বেরোতেই ডাক্তার কোলে মেডিকেলের সামসুলকে ডেকে এক ঠোঙা মুড়ি-বাদাম আনতে দেন। বয়স বাড়ছে। রাতে দুটো রুটি আর এক বাটি সব্জি। নো মাছ-মাংস। আজ আবার জাজোরিয়াদের ফ্ল্যাটটা বুকিং এর ব্যাপারে চেম্বার শেষে একবার, এস পি'র সাথে দেখা করতে যাবেন। এই চেম্বার কতক্ষণে যে শেষ হবে.....
সামসুল এসে ঠোঙা হাতে দাঁড়ায়। ডাক্তার বলেন-খাচ্ছি
সামসুল যায় না- একটা কথা ছিল
- বল
- আপনার ত চেনা অনেক,কলকাতার দিকে একটা ফার্মেসিতে যদি কাজ হয়...এখানে টাকা নেই
- দেখছি, নেক্সট রুগি পাঠাও
চেম্বার শেষ করে ফোন লাগান-- বিকাশ, গাড়িটা নিয়ে এস।
রাস্তায় নামতেই গাড়িতে ওঠার মুখে এল-আই-সি-র এজেন্ট অশোক ধরে-স্যার, আমাদের একটা বন্ড কিনুন, পাঁচ বছরে টাকা ডবল। গ্যারান্টি।
- আজ একটু তাড়া আছে। নেক্সট সপ্তাহে কথা বলি?
- ঠিক আছে,স্যার একটু খেয়াল রাখবেন। স্যার, ডায়মন্ডে ভালো ইলিশ উঠেছে।
বিকাশ গাড়ি স্টার্ট দিয়েই ছিল। ভিতরে ঢুকে কাঁচ তুলে এসিটা হাল্কা করে চালিয়ে দিতে বলেন। শার্টের বাটনগুলি আলগা করে ফোন হাতে নিতেই একটা ফোন ঢোকে।
-স্যার, জাজোরিয়া কন্সট্রাকশন থেকে বলছি, এস পি স্যার নম্বর দিলেন।
-বলুন
-সাউথ-ইস্টের ফ্ল্যাটটার হাই ডিমান্ড, বেশি হোল্ড করে রাখা যাবে না। একটা প্রি-বুকিং অ্যামাউন্ট দিলে…
-কত?
-লাখ ২০ দিলেই হবে স্যার, বলেন ত ব্যাঙ্ক লোন...
-১০-এ হবে?
-কিন্তু…
-নেব সিওর, তবে যদি পছন্দ না হয় তাহলে কি টাকা রিফান্ড হবে?
-কথা বলে দেখছি স্যার…
ফোন কেটে যায়। এল-আই-সি-র অশোকের কথা মাথায় ঘোরে। দোস্তিপুর আসতেই বিকাশকে বলেন—গাড়ি ঘোরাও, ডায়মন্ডে যাব।
-স্যার কি ইলিশ কিনবেন?
- দেখি…
ডায়মন্ড গঙ্গার ধারে টাটকা তাজা ইলিশ। সন্ধেবেলা দর ২৬০০ টাকা। সকালে লোকাল মাস্টাররা কেনে ১৬০০/১৭০০। ওই ১১০০/১২০০ গ্রাম। ডাক্তার ভাবেন—এত পলিউশনে ইলিশ বাড়ে কী করে! দিনে দিনে সব বিষিয়ে যাচ্ছে।
বিকাশের হাতে ২৬০০ টাকা দেন। কলাপাতায় প্যাক করা সোনালী শস্য চারচাকার ভিতরে উঠে আসে। চারচাকা মুখ ঘুরিয়ে আবার কলকাতার দিকে দৌড় লাগায়। ডাক্তারের মুখজোড়া প্রশান্তি। এল-আই-সি নাকি আদানির শেয়ার কিনেছে? আদানির শেয়ারের দাম ত ধ্যার ধ্যার করে পড়ছে। এল-আই-সি ডুবে গেলে? তারচেয়ে আরেকটা ফ্ল্যাট রাজারহাটের দিকে কিনলে ৯/১০ কোটি ইনভেস্ট হয়ে রইল। সিরাজকে ফোন লাগান-- কালকে কি রঙের কাজটা করবে ত?
-স্যার, লেবারের বড় ক্রাইসিস।
-কিন্তু, কাজটা পিছোচ্ছে…
-স্যার, সব বাইরে কাজে যাচ্ছে। খুচরো লেবার পাওয়া মুশকিল। দেখছি।
ডাক্তার বিরক্ত হন। শালা এই পলিটিক্স করেই ওয়ার্ক কালচারের...
আর তার মধ্যে লক্ষ্মীর ভান্ডার....না মনকে শান্ত করতে হবে....কানে হেডফোন লাগিয়ে গা হেলিয়ে শান্তি স্তোত্রম চালিয়ে দেন- ওম সহনা ভবতু, সহনৌ ভুনক্তু, সহ বীর্যং করবাবহৈ......
আগস্ট, ২০২৪