ও সে গৌর প্রেমে বিভোর হয়ে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বেলে যায়……….

লিখেছেন:পার্থ কয়াল
গুণগুণ করে গান গাইতে গাইতে হারাধন চলেছে তার ভাঙাচোরা সাইকেল খানা  নিয়ে। সাইডে আর হ্যান্ডেল থেকে গাঁদা আর জবার বোঁচকা ঝুলছে। হারাধনের এই গান শুনতে শুনতে এই সময়টায় মাস্টার ভাবে বিভোর হয়ে থাকেন।...কিন্তু মাস্টার কি সত্যিই ভাবে বিভোর হয়ে থাকেন?

 

                                 গুণগুণ করে গান গাইতে গাইতে হারাধন চলেছে তার ভাঙাচোরা সাইকেল খানা  নিয়ে। সাইডে আর হ্যান্ডেল থেকে গাঁদা আর জবার বোঁচকা ঝুলছে। হারাধনের এই গান শুনতে শুনতে এই সময়টায় মাস্টার ভাবে বিভোর হয়ে থাকেন। হারা থাকে সেই চরণের দিকে। রাতে দুটোর সময় ঘর থেকে বেরিয়ে ফাস্ট ক্যানিং ধরে বালিগঞ্জ হয়ে বজবজ……. মাস্টার বহুবার বলেছেন-‘হারা, ফুল দিয়ে ফেরার পথে আমার বাড়িতে রেস্ট নিয়ে ট্রেন ধরিস।‘ হারা প্রতিবার হেসে বলে- যাব।  তবে আসে না আর কোনোদিন।

         পূর্ণেন্দু মাস্টারের সাত সকালে ওঠা বহুদিনের অভ্যাস। দেশের বাড়িতে সকালে উঠে  মাস্টার যেতেন গরুর গোয়ালে। মাস্টারের বউ ততক্ষণে উঠান ঝাঁট দিয়ে গোয়ালে চলে আসত।  দুজনে মিলে গোয়াল পরিস্কার করে গরুকে মাঠে নিয়ে যাওয়া, মাঠে চাষ থাকলে তার দেখভাল, মুনিষ লাগানো………তখন এইসব করে স্কুলে যাওয়া। সেসব এক দিন ছিল। এই রিটায়ারমেন্টের পর বড় ছেলে স্কুলে চাকরি পেল সেই কলকাতার দিকে আর ছোট ছেলেটা……বড়টা চিরকাল বুঝদার। বিশালক্ষীতলায় চাল ব্যাবসা করে সেই ক্লাস টুয়েল্ভ পড়ার সময় থেকে। তাতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তার পর কলেজ কমপ্লিট করেই চাকরির পরীক্ষায় …আগে থেকেই অবশ্যি পরীক্ষা দিতে শুরু করেছিল…মেয়েটাও আস্তে আস্তে তার মত করে কলেজ কমপ্লিট করে চাকরি, জামাই টাকেও ভালোই ধরেছে…ইঞ্জিনীয়ার, শ্রীরাম বিল্ডার্সে এখন কাজ করে , যদিও কাগজ আর খবরের চ্যানেল গুলি যা উৎপাত করছে ওই মন্ত্রী মশাইয়ের টাকা নাকি এই বিল্ডার্সের মারফত …ওফ শান্তিতে থাকার জো নেই…ত ছোট ছেলেটা এদের মধ্যে পড়াশুনায় সবচেয়ে ভালো ছিল, কিন্তু কলেজে ভর্তি হয়ে যেই সেকেন্ড  ইয়ারে বাবু উঠলেন, অমনি কোত্থেকে একটা অন্য বর্ণের মেয়ের সাথে…তাও, পার্টি, গ্রামের লোক মিলে, কলেজে আর  মেয়েটার বাড়িতে চাপ বাড়িয়ে ছাড়ানো হোল, ত ছেলে বলে আর কলেজই যাবুনি। কলেজটা পাস করলে না হয় দূর সম্পর্কের জ্ঞাতি, ভাইঝি জামাই-এর মামার হাত ধরে প্রাইমারীর সহায়ক করে দেবেন…আর এই চড়িয়াল বাজারে দোকান, বিশালক্ষীতলায় নিজেদের জলজমি আর বাস্তু লাগোয়া পেয়ারা বাগান,…কিন্তু, নাহ ছোটর সেদিকে মনই নেই, কেবল আজ এই মেয়ে, কাল সেই বউদি,  হঠাৎ হুশ ফেরে ঝুমা দি, না ঝুমার ডাকে, ষাট হয়ে গেল, তবুও চেহারাটা দিব্যি, কি সুন্দর একটা অ্যাশ কালারের উপর সাদা ছোট ফুলফুল প্রিন্টের একটা সালোয়ার পর… গায়ের চাপা রংএর সাথে দিব্যি মানিয়েছে …মাস্টার নিজের চেহারাটাও দিব্যি ধরে রেখেছেন,টিকালো নাক-মুখ, এখনো মাথার চুল সেরকম পাকেনি, গোঁফ টাও সাদা কালো মেশানো,হাতের চামড়া এখনো টানটান…

ঝুমা ডাকেন-কি দাদা, বাদলদা এসে যাবে, চলুন মাঠের দিকে

প্রস্তাবটা মন্দ না, এই ঠান্ডায় একা একা দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে কানের উপর টুপিটা টানতে টানতে ভাবেন।গঙ্গাসাগর না গেলে ঠান্ডাটা যাবে না।  বাদলের রিটায়ারমেন্টের বছর দুই দেরী। আর আসেন অমর স্যার। কালীচরণে যেখানে পূর্ণেন্দু মাস্টার ক্লার্ক ছিলেন তার থেকে কিলোমিটার পাঁচেক দূরে অমর স্যার হেড স্যার ছিলেন। কাকে কি বাঁশ দেবেন সে বিষয়ে অমর স্যারের কাছে যথেষ্ট জেনে বুঝে তবেই  মাস্টার এগোতেন। অমর স্যার-ই ওনার পার্টির কানেকশান কাজে লাগিয়ে চড়িয়ালের এই জমির খোঁজ দেন।  প্রায় জলের দরে , আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে, তিন কাঠা ডাঙ্গা জমি দশ হাজার টাকায়……ঝুমা ডাকেন

-ও দাদা, এবার গঙ্গাসাগর গেলেন না?

-না, চারবার গেছি

-আর একবার যেতেন বৌদিকে নিয়ে, নতুন ক্রজ লাইনটায়…… ভালো লাগত

চাকরি যখন পেলেন সেই বছরই বিয়ে। তনয়াকে তখন কি দেখতে ছিল, যেন গোলাপখাস আর রসগোল্লার মিক্সচার। বিয়াল্লিশ বছর পার হয়ে গেছে। বিয়াল্লিশ বছরের পুরোণো বউকে নিয়ে……না, মন থেকে ইচ্ছে করে না। ঝুমা চেহারাটা বেশ ধরে রেখেছে। এখন একফোঁটা মেদ নেই, গাল মসৃণ চকচকে……মনে মনে আজকের কাজ গুলি গুছিয়ে নেন। ফেরার পথে বাজার করতে হবে, বাজারের ব্যাগ হিরুর চা দোকানে রাখা আছে, টবের গাছে জল দেওয়া, নাতিটাকে স্কুলে দিয়ে আসা, একবার সিপ অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে কথা বলা, বিকালে তনয়ার জন্য হাঁটুর ব্যাপারে ডাক্তার খানায় যেতে হবে, সকালে তাই নাম লিখিয়ে আসা

-নাতনিকে কোথায় ভর্তি করাবেন? ‘ ঝুমা জিজ্ঞেস করেন

-আমার ইচ্ছে বাড়ির কাছাকাছি ভর্তি করানোর। তবে বৌমার ইচ্ছে কারমেলে। কারমেলে না হলে সেন্ট জোসেফ

-আমার নাতিটাকেও তো সেন্ট জোসেফেই দেব বলে ঠিক করেছিলাম। তবে অ্যানি বেসান্তেই দিলাম। যদিও মাস গেলে টিউশন ফি টা একটু বেশী ৩৫০০/

মাস্টার ভাবেন এলেম থাকলে তো সেন্ট জোসেফে দিবি। নিজের নাতিটাকে অবশ্য সেন্ট  জোসেফে দিলে মন্দ হয় না। মামাশ্বশুরের ছেলের বউটা ওখানে পড়ায়। একে একবার বলে দেখবেন? না, আগে একবার তনয়ার সাথে কথা বলে নেওয়া ভালো।

ঝুমার কথায় হুশ ফেরে-ওই আপনার পার্টনার বাদলদা এসে গেছে

মাস্টার দেখেন, ভাবেন – কেন তুমি কি? পার্টনার…

বাদল এসেই যেন বড্ড বিরক্তি নিয়ে বলেন-বড্ড দেরি হয়ে গেল

বাদল চাকরি করে এজি বেঙ্গলে, একটু ভারিক্কি কিন্তু শক্তপোক্ত চেহারা, গায়ে ডেকালথনের থেকে কেনা ট্র্যাকশুটটা বেশ দামি, মানিয়েছে ভাল

-কেন

-আর বলেন কেন, বাড়ির সামনে ময়লা ফেলে রেখেছে

-কে?

-কে জানব কি করে? মিনিমাম সিভিক সেন্সটাও নেই। নেতাজীর মত রাস্ট্রনায়ক থাকলে…

-এখন হলে নেতাজী পারতেন না, মিলিটারি শাসন দরকার ছিল

-আসলে ড্যাশের ছেলেদের দেশ…কেবল লোডের উপর লোড হচ্ছে…বেড়েই চলেছে

-রোজ সকালে বিকালে দু-এক টুকরো না হলে ভাত রচে না, সেই গরমটা যাবে কোথায়?

মাঠের চারপাশ পেভার ব্লক দিয়ে বাঁধিয়ে হাঁটার রাস্তা। মাঝে মধ্যে বসার বেঞ্চ। শ্যামাপ্রসাদ বাবুর আশির উপর বয়স। এই বয়সেও রেগুলার মাঠে আসেন। স্রীর ভারি হলেও হাঁটাচলা তার হালকা ব্যায়াম করে নিজেকে দিব্যি সচল রেখেছেন। বলেন-হরে রাম, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ,হরে হরে

মাস্টার বলেন-কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে

শ্যামাপ্রসাদ জিজ্ঞেস করেন-অ মাস্টার , চাকদা লাইনে নাকি এ সি লোকাল ট্রেন চলতাসে?

-আমি কাগজে দেখছি, কেন যাবেন?

-বয়স ত হইসে, লোকাল ট্রেনে ভিড় ঢেইলা…

কথা বেশি এগোতে দেন না, বুড়ো বকতে শুরু করলে

-তা ভিড় ত একটু কম হবেই

-তবে ভাই আমার অযোধ্যা যাওনের ইসসা খুব, ওরা ত কইসে ১৬০০/ তে লইয়া যাবে।।

মাস্টারের কালকের কাগজের অ্যাড’টার কথা মনে আসে। অমিতাভ ত ওখানে প্রোমোটিং করছেন…বলতে নেই চেহারা এখনো অ্যাট্রাকটিভ...সরযু এনক্লেভ…বড়কে বলে একটা খোঁজ লাগাতে হবে, জামাইটাও টেনশনে আছে, নিজের গ্র্যাচূইটির টাকাটা ত ফিক্সড করা আছে, ওটা ভেঙে আর বড়র ব্যাবসাও ত মন্দ না, ওকেও কিছু টাকা দিতে বলবেন…নিজেরা অযোধ্যা গেলে থাকা যাবে আর অন্য সময় ভাড়াও খাটানো যাবে। হঠাৎ গুটকের ডাকে চিন্তার জালটা কেটে যায়,গুটকে এই মাঠেই ফুটবল খেলতে আসে

-কাকাবাবু তোমার বাড়ি রঙ করাবে বলছিলে না?

-হ্যাঁ কিন্তু সে ত দেরি আছে

-করালে বোলো, কোম্পানীর চেয়ে কম রেটে একই রকম কাজ করে দোব

-দেখছি

গুটকে রোগা চেহারা, ক্ষয়াটে কালো দাঁত বার করে হাসি হাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। 

পিছন থেকে তাপসের হাঁক আসে-এই গুটকে, তুই কি খেলবি?

গুটকে বলে-বোলো কিন্তু

  মাস্টার হাত দেখিয়ে আগে পা চালান,অমর দা গেট পেরিয়ে ঢোকেন মাঠে।

মাস্টার বলেন-দাদা আজ বড্ড দেরি করলেন। আমাদের দু পাক হয়ে গেল আর আমি বড়জোর একপাক দেবো।

 অমর বাবু বলেন-ঠিক আছে।

অমর বাবু চিরকালের সফট স্পোকেন…পার্টিতে এই ইমেজ টার জন্য খ্যাতি আর অখ্যাতি দুই আছে। এখন খাদির জিনিসপত্রই বাড়িতে ব্যবহার করেন।পরেন খদ্দরের। বেশ একটা শান্ত,সৌম্য ভাব, চকচকে। কথাও বলেন ধীরে ধীরে। গুটকের ফিরে যাওয়া ছায়ার দিকে দেখতে দেখতে বলেন-টাটারা যদি সিঙ্গুরে আসত তাহলে কিছু অক্সিলিয়ারি ইন্ডাস্ট্রি, তাকে ঘিরে কিছু ছেলের কর্ম সংস্থান…

বাদল- কিন্তু সানন্দে নাকি কারখানা বন্ধ ?

অমর - আপগ্রেড ভারসান হত এখানে। গুজরাটে কি আর কাজের পরিবেশ আছে? দক্ষ মজুর আমাদের এখানে যত সস্তায় পাবে…

বেলা বাড়ছে। ছেলেটা মাছের ঝোল ভাত খেয়ে স্কুল বেরোবে। মাস্টার বলেন

-এবার বাজার হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।

   বাজারে যাওয়ার পথে দোকান টা খুলে বাজারে চলে যাবেন।  ততক্ষণ বিধান আর ইলিয়াস দোকানটা সামলাবে

অমর বাবু- চলুন চা খেয়ে বাজারের দিকে যাই

পায়ে পায়ে এগোন হিরুর চা দোকানে।

অমর বাবু অর্ডার করেন-তিনটে

হিরু বাজারের ব্যাগ টা মাস্টারের হাতে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে-তিনটেই চিনি ছাড়া ত?

বাদল- হ্যাঁ , আমায় একটা নোনতা দে, আপনারা কিছু খাবেন?

সবাই হিরুর চা দোকানে ঢোকেন,এই সময় চা দোকানে তেমন একটা ভিড় নেই। এই মর্নিং ওয়াকের লোকজন আর কিছু রিক্সায়ালা, ভ্যান ওয়ালা, ফলের দোকান চালায় এমন খুচরো লোক। সুকদেব সরে বসে। ওর হাতের বড় ফোনে –এই মুহূর্তে  আমরা দেখছি শাহজাহানের বাড়ি রেইড করতে গিয়ে জনতার হাতে ঘেরাও ইডির  অফিসারেরা…আসুন আমরা জানি কে এই শাহজাহান ...

সুকদেব সকালে চড়িয়াল ব্রীজের পুব পারে দোকান লাগায়। ২২বছরের পুরানো দোকান , তবুও ভ্যানের উপর। বিকালে পশ্চিম পারে। নতুন ব্রীজ তৈরী হতে শুরু করার পর ব্রীজের পুবে, বটতলার বাজারে ঢোকার মুখের জায়গাটা থেকে পুলিশ হটিয়ে দিল। এখন ব্রীজ কোম্পানীর দখলে। দেশের উন্নতির সামনে তো আর ব্যক্তিগত আপত্তির জায়গা নেই।  সুকদেবের ছেলে ওই ব্রিজের ওপারে  মাঠপুকুর ঢোকার মুখে ফল দোকান দিয়েছে। ওই দোকানটা মুসলিম পাড়ার মুখে একটু অফ সাইডে। দোকানে কেনা বেচা ভাল কিন্তু পড়তা নেই। রাস্তার উপর দোকানে আপেল ১২০গেলে , ওখানে ১০০। তাও এক কেজি নিয়ে ৯০ ঠেকাবে। ছেলের কথায় বোকাচোদার সাইডে দোকান। হিরুর দোকানে এই সময় ঢোকে মনিরুল, সুকদেব কে বলে- কি রে ব্যাটার বে দিবিনি?

সুকদেব-সে ছাওয়াল কি আমার অপেক্ষায় আছে?  মেয়ে ঠিক করা আচে

-কোথাকার?

-সোনারপুরের। সামনের হপ্তায় দেখতে যাওয়া। মানে অই আর কি

হিরু চা করতে করতে ভুড়ির নিচে লুঙ্গিটা কষে বাঁধে। নিচু হয়েএকটা হলুদ হেলমেট একটা মাটির ভাঁড় ভর্তি ক্রেটের উপর থেকে নিয়ে গ্যাস উনুনের পাশে রাখে।

-হ্যারে সুকদেব দা, এটা কি তোর?

-না, আমার না, তবে একটা হেলমেট দরকার ছিল

-এটা একমাস ধরে এখানে পড়ে আছে। একটা ছেলে মাসখানেক আগে বাইক থেকে নেমে হেলমেট খুলে চা খেয়ে গেল। ওরই হবে

দেখি মালটা- থানার ডিউটি অফিসার বলেন। সকালে চা খেতে এই দোকানেই আসেন। আর চা খেয়ে ফুল কিনে নিয়ে কোয়ার্টারে ফেরেন। সাত্ত্বিক লোক। হেলমেট হাতে নিয়ে উলটে-পাল্টে  দেখেন

-আমি নেব। একটা দরকার ছিল

সুকদেব বলে –রাখেন স্যার

-তুমি নেবে না?

-আরে স্যার, বাইকে করে কতদিকে আপনাকে যেতে হয়। রাখেন

- আর মারা কাল রাতে, টয়লেটে গেছি ডিউটির ফাঁকে, কোন বোকাচোদা দেখি আমার হেলমেটটা সেই ফাঁকে সরিয়ে রেখেছে। ফিরে এসে চার্দিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা। বলি- যাকে ধরতে পারবো তার গাঁড় ভেঙে দোব

হিরু তিনটে লিকার চা ছাঁকতে ছাঁকতে বলে –বেরোলো?

-বেরোবে না মানে? একটা সিভিক, ওই ঢুকে ডান ধারে বসার বেঞ্চের পাশে কাগজে ঢিপি, ওর মধ্যে থেকে বার করলো। শালা, লোকজন এত ছ্যাঁচড়া হয়ে গেছে না।

হিরু হাঁক দেয় –মাষ্টার মশাই , চা , একটা প্ল্যাস্টিকের ট্রে তিনটে চা এগিয়ে দেয়

ইমতিয়াজ ঢোকেন বাজারের থলি হাতে। ওয়েল্ডিং এর কাজ করতেন, মাস্টারের কাছাকাছি বয়স। একসময় একসাথে লাল ঝান্ডার মিছিলেও হেঁটেছেন, এখন লম্বা দাড়ি রেখেছেন। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে কেরলে জোগাড়ের কাজে গেছে। হিরু বলে

-কিরে ইমতিয়াজ দা,এবার ত বাজারের ব্যাগ নে ব্যাংকে যেতে হবে

-কেন বাপ?

কেন কিরে? তোদের দিদি ত ইলেকশানের আগে সব টাকা ক্লিয়ার করে দেবে

-সে সব কি আর হাতে সবার আসবে? এই ত বার্ধক্য ভাতা সবার হবে বলে নে গেল টোটো করে, মিটিং হল, কিন্তু কিছু হল কি?

-এবার হবে

-তা নেতাদের দিয়ে থুয়ে কি আসবে কি জানি?

-কেন রে দা?  তোর বর্ণের নেতা সব…

- হ্যাঁ রে বাপ, পেছন মারার বেলায় কেউ ছাড়েনে…

চা দোকানের টাকা মিটিয়ে দেন অমর বাবু। মাস্টার বলেন

-তাড়াতাড়ি যাই

অমর বাবুর একটু দাঁড়ানোর ইচ্ছে- অত তাড়া কিসের? বাজারে ত শুধু মাছই কিনবে

-না একটু রেশন দোকানে যেতে হবে, তারপর বাড়ির টবে লাগানো গাছে ট্যাপের জলটা পাইপে করে দিলে সুবিধে

মনিরুল পেছনের থেকে বলে

-মাস্টারবাবু , ট্যাপের জলে এবার নাকি মিটার বসবে, আমার শালা থাকে সল্টলেকে, ওখানে ত মিটার সিস্টেম

-এখন ত ফ্রি, তাই দিচ্ছি আর গাছ গুলোও ভালো থাকে

-আর রেশনের মালটাও ত প্রায় ফ্রি? ফ্রি এর মাল হেব্বি লাগে কিন্তু

-হ্যাঁ পোকা হলেও, ভাঙ্গা হলেও কমে ত আসছে

-সরকার নাকি রেশন দোকানে এবার কুকুর তাড়ানোর পাঁচন বাড়ি রাখবে

মনিরুল খ্যাঁকখ্যাঁকে হাসি দেয়। সুকদেব মুখ ঘোরায়। মাস্টার কি বলবেন ভেবে কুল পান না। সাত তাড়াতাড়ি দোকানের বাইরে আসেন।

এমন সময় ফোনে রিং হয়…আশায় আশায়…হ্যালো, বল ভজা, কি খবর?

-আরে হ্যাঁ হ্যাঁ রাজীব ফোন করেছিল, বলেছে

-কি করবি কি বলব বলত? পাইপ ফেলবে  ত ফেলবে

-না দ্বিজকে আমি কিছু বলতে পারব না

-হোক উপ্প্রধান। ওদের জমির জাঙ্গাল কাটা নিয়ে সেই গন্ডগোলটা মনে নেই?

-হ্যাঁ তুই তর মত করে বুঝে নে

-না, এখন যাওয়া সম্ভব নয়। সই এর কাগজ নিয়ে আসিস , সই করে দেব। রাখি

 ফোন টা রাখতে না রাখতেই, গুজরাট থেকে পিসতোতো ভাই মান্তুর ফোন আসে। ক্লাস এইট অবদি কোনরকমে স্কুল করে পাসের বাড়ির সুধীর কা’র সাথে গুজরাটে কাজে চলে গেল। মান্তু ছোটবেলায় হাতের কাছে যে খেলনা পেত সেটাই খুলে দেখত। গুজরাটে পেভার ব্লক তৈরীর কারখানায় কাজ করত…তখন ওই পেভার ব্লকের মেশিন আসত সুইডেন থেকে আর খারাপ হলে সেই সুইডিশ ইঞ্জিনীয়ার…মান্তু মেশিন সারানোর সময় ইঞ্জিনিয়ারদের পাশে পাশে থাকত, এটা সেটা হাতে বাড়িয়ে দিত। এই করতে করতে ও মেশিন সারানোর কাজ একবার নিজেই করে ফেলল মালিকের পারমিশন নিয়ে। তারপর থেকে মালিক ওকে ইন্সেন্টিভ দিতে শুরু করল। মান্তুর মাথায় ছিল অন্য কিছু। ও আস্তে আস্তে মালিককে বলতে শুরু করে যে, ও ইন্সেন্টিভ চায় না, শেয়ার চায়। মালিকও ওকে শেয়ার দিতে শুরু করল। তারপর ও নিজেই ওই কারখানার পাশে একটা কারখানা বানাল। তবে গ্রাম কে ও ভুলে যায়নি। এখন প্রতিবছর নিয়ম করে দূর্গাপুজার সময় আসে। গ্রামের পুজোয় চাঁদা দেয়। বিজয়ার পর ওর পয়সায় সারা গ্রামের লোককে খাওয়ায়। যারা ওদের জমি চাষ করে, তাদের নতুন কাপড় দেয়…এগুলো এখনো বজায় রেখেছে

-কিরে কোথায়?

-ওহ, কত কাঠা?

-অ্যাঁ, দেড় কোটি?

-একদম কারখানার পাশের জমি?

-বাহঃ ,আর পার্টিকে?

-কি ১০%। ঠিক আছে

-আরে হ্যাঁ হ্যাঁ, ব্যবসা যা হবে ওই পয়সা এমনি উঠে আসবে

- ওখানে ৪তলা ফ্ল্যাট…কেন?

-লেবার দের ভাড়া দিবি? নিচে ক্যান্টিন…বেশ বেশ…

-হ্যাঁ হ্যাঁ আরে বল না

-হ্যাঁ ভজা ত আমাকে ফোন করেছিল, যা বলার বলেছি

-আমাকে অত বোকা পেলি? আমি দশজনের সই এর কথা বলে ছেড়ে দিয়েছি

-রাস্তার ওপেন ফ্রন্টটার কথা বলছিস ত? বাস স্টপের পাশে?

-দাঁড়া এক মিনিট

মাস্টার নিজের দোকানের সামনে ইলিয়াস দাঁড়িয়ে আছে দেখেন। পকেট থেকে সাটারের চাবি টা বের করে ইলিয়াস কে দেন। ইলিয়াস সাটার টা খুলতে এগোয়

-হ্যাঁ, ,ভজা বলেছিল দ্বিজ’র সাথে কথা বলতে

-আমি বুঝি রে ভাই, দ্বিজ’ই ভজাকে দিয়ে ফোন করাচ্ছে

-কি? না, টেনশন নিচ্ছি না।

-হ্যাঁ, টাকা পাঠা, ফাগুন মাসের আগেই ঠাকুর ঘরটা ঠিক করে দেব। আর মোচ্ছবের পরের দিন পাত পেড়ে খাওয়া।

-না দেরী কিসের? ইলেকশনের আগে অত ঝামেলা ওরা করবে না।

মনে মনে ভাবেন শাহজাহানের কেস টা হয়ে ভালই হয়েছে। ইলিয়াস সাটার তুলে ঝাড়ন দিয়ে চেয়ার আর টেবিলটা ঝেড়ে দেয়। ইলিয়াস বলে-কাকাবাবু, একটা কথা ছিল

-কি? আবার টাকা চাই?

-আসলে, মেয়ের জামাইটা কেরলে কাজে গেচে, এখন কিছু পাঠায় নে, ওর কিছু জ্বালন দরকার, গ্যাসের ঝা দাম…

-এই ত সেদিন নিলি

কথার মাঝেই ফোন ঢোকে।

-হ্যাঁ বল দ্বিজ, কেমন আছিস রে?

-আমরা ভালো আছি , কাকিমা কেমন আছে?

-হ্যাঁ হ্যাঁ ওয়েদার টা এত চেঞ্জ হয়ে গেছে

-হ্যাঁ চেক আপে থাকলে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে, সে সময় লাগুক

-হ্যাঁ বল না কি বল বি

-আমার জমির উপর দিয়ে পাইপ লাইন নিয়ে যেতে দোব না বলিনি ত, বলেছি দশজনে সই দিলে আমিও দোব

-কোন গাছ টার কথা বলছিস?

-আচ্ছা, হ্যাঁ ওই খিরিশ গাছ টা ত আমার ফ্রন্টটের গাছ, তাতে সরকারী বেসরকারি আসছে কোত্থেকে?

-কি পঞ্চায়েতে আপত্তি জমা দিয়েছে? কে?

-ঠিক আছে বলিস না, কে দিতে পারে আমি জানি। তুই পরে ফোন করিস

ফোনটা কেটে দেন। ইলিয়াস তখনও দাঁড়িয়ে।

-কাকা ৩০০টা টাকা বড্ড দরকার।

-সে তো বুঝলাম, এই ত সেদিন ৫০০/ নিলি

-সে ত কাকা, বউয়ের শরীর খারাপে লেগে গেল। ৫০০/ কি হয় বল? ডাক্তার-ওষুধ পালা এই করতেই বেরিয়ে গেল।

-অত আমার জেনে কি হবে?

-আমি ভ্যান টেনে সব শোধ করে দোব

-কত দিনে দিবি বাপ? সারাদিনে কটা ট্রিপ হচ্ছে? মেচের কারবার কি আর আগের মত আছে?

-দও কাকা। অমন করুনি

-ঠিক আছে দেখছি। ওই ১৬টা বস্তা আছে, তুই আর বিধান মিলে বয়ে দে। বাদামতলা নিয়ে যেতে হবে। ট্রিপ পিছু ৬০ করে দেবে বলেছে।

-কাকা দুটো ট্রিপ হবে তাও আবার ভাগাভাগি?

-তুই একাই সব খাবি? বিধানের ছেলেটার মাধ্যমিক । ওর ও তো টাকার দরকার আছে নাকি?

ইলিয়াস আর কিছু বলে না। মাস্টারের সাথে বেশি কথা মানেই হাজারে বেজার। সকাল থেকেই মেজাজ টা খারাপ। একে বউ-এর শরীর খারাপ। তার উপর মেয়েটার জামাইটা কেরালায় কাজে গেছে। দুটো কোলের বাচ্চা। শ্বশুর-শ্বাউড়ি আছে। নিশ্চিন্তিপুরের ভিতর দিকে ঘর। ওখানে জ্বালনের সমস্যা খুব। রোজ শ্বাশুরির সাথে খিচির-মিচির। কাল রাতে ফোন করে কাঁদছিল। লকডাউনের পর থেকেই বাজারে কাজ কম। ছোট মুদি খানার মাল নিয়ে যাওয়ার জন্য আগে ভ্যান দরকার হত। এখন সে-সব পড়তির দিকে। মাঝে মেটেবুরুজেও চেষ্টা করেছিল, চাচাতো ভাইকে ধরে। সে বলে –দা , আমাদেরই কাজ কম, তা তোমারে কি বলি বল?

আজ সকালে ঘর থেকে ভ্যান নিয়ে বেরোবার সময় বউ বাজারের জন্য হাত পাতে।

-১০০টাকা দে যাও না

 রোগা চামড়া লেগে থাকা হাতটা বাড়ায়, আঙুলের মাথায়  পড়া কড়া বলে জরির কাজের রোজকার হিসেব নিকেশের কথা

-কি করবি?

-বাজার করতি হবে নে? ৫০টাকার গোশ আর আলু, আর মশলাপাতি

-তুই আর ছুটকি মিলে জরির কাজ করতিছিস। দিদি ৫০০ করে দেচ্ছে…তবুও আমার কাছে হাত পাতিস? আমায় দশ টাকা দে দিকি। চা খাবার পয়সা নি…

বউ গজ গজ করতে করতে ঘর থেকে বেরোয়। অ্যাসবেস্টস শেডের ঘর। আড়ার কাঠ গুলো পাল্টালে ভাল হয়। বাবলা গাছের আড়া হলে সবচে ভালো হত। হাতে টাকাও নেই আর বাবলা গাছই বা কোথায়। ইলিয়াস কি মনে করে বিছনার উলটে নিচে রাখা  শাড়ির ভাঁজ হাতড়ায়। একটা দশ টাকা খুঁজে পেতেই দৌড়ে বেরিয়ে আসে। বউ ঠাহর করে পেছু নিতে নিতে ইলিয়াস ভ্যান টেনে নুরুদের ঘর পেরোয়। বউ পিছনে গাল পাড়ে- এই খানকীর ছেলে, না বলে টাকা নিলি কেন?

ইলিয়াস সোজা একটা চা দোকানে ঢুকে একটা চা-বিস্কুট আর দু টাকার বিড়ি নিয়ে মাস্টারের ছেলের দোকানের সামনে ভ্যান লাগিয়েছে।

মাস্টারের মাথায় চিন্তা, বিশুকে একবার ফোন করবেন? কাওড়া দের বাড়ির ছেলে। ওর বাপ ভ্যান চালাত, ছেলেটা উচ্চমাধ্যমিক পাস করে এদিক সেদিক করে পদ্মফুলে গিয়ে লাস্ট বিধান সভার পর ঘাস ফুলে এসেছে। মার খেতেও পারে আবার দিতেও পারে।ও ঘাস ফুলে থাকলেও মন দিয়েছে পদ্মে। হিরুর দূর সম্পর্কের আত্মীয়…হিরুকে বলবেন? যদি দ্বিজ কে আটকানোর । আচ্ছা দ্বিজ ত ইঁট ভাটা থেকে ইঁট নিয়ে সাপ্লাই দেয়, ওখানে পাশের বাগদি পাড়ার এক বিধবার সাথে…

   ওই বিধান আসছে। বিধান, ইলিয়াসের স্কুলের বন্ধু, কিন্তু এখন দেখলেই মনটা কেমন খিঁচ খিঁচ করতে থাকে। ইলিয়াস জানে, মাস্টার, বিধানকে রেখে চলে। এটা তো ঠিক যে, বাঙ্গালিরাই বাঙ্গালিদের দেখবে। এই ত দিন কয়েক আগে, পুজালীতে মাল নিয়ে গেল ও আর বিধান। ইলিয়াসের সেদিন শরীরটা জুতে ছিল না। মাস্টারকে বলেওছিল। কিন্তু গিয়ে দেখল, বিধানের ডেলিভারী দোকানটা মেন রাস্তায় আর ইলিয়াস কে ভিতরে ঢুকতে হল। ইঁটের রাস্তা মাঝখান বসে গেছে, গাড়ি টানতে গিয়ে জিভ বেরোনোর জোগাড়। আজও মেচের বস্তা ভ্যানে তুলতে তুলতে বিধানকে বলে-টিফিন করিচিস?

    বিধান- না, কেন তুই করাবি?

ইলিয়াস-চ,পরোটা আর ভুনা মেরে আসি

বিধান-এই ঝা করতিচিস কর। মুখ ভেঙে দূব

ইলিয়াস-কেন মারা? গেল বকরী ঈদেও ত আমাদের বাড়ি গে পরোটা দে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেলি

বিধান - আর একটা কতা বললি এক দোমকায় মুখ ভেঙে দুবরে খানকীর ছেলে

ইলিয়াস- তোর মাকে চুদি

বিধান একটা থানকা তুলে তেড়ে আসে। মাস্টার দৌড়ে এসে আটকান। বিধান রাগে ফোঁসে-শালা দিদির জমানা বলে…

মাস্টার, ইলিয়াসকে বলেন-হ্যাঁরে তোর বাপ ত এমন ছিলনা?

ইলিয়াস মাথা নিচু করে থাকে। মাস্টার সরে গেলে বিধান বলে-শালা দাঁড়ানা এই চব্বিশের ইলেকশান টা হোতে দে…

ইলিয়াস-তোর গাঁড় ভেঙে দোব

বিধান- একা একা হোলে কোন বাপকা বেটা নেই যে আমার গাঁড় ভাঙবে। আয় তুই, তোর বিচি ছিঁড়ে হাতে দে দোব

দুজনে গজ গজ করতে করতে ভ্যানে বস্তা সাজায়। ইলিয়াসকে ট্রিপ করতে করতে ভাবে একবার সলমানের সাথে কথা বলতে হবে। বিধানটা বড্ড বেড়েছে। ট্রিপ সেরে এলে মাস্টার ৩৬০টাকা দেয়। ইলিয়াস নতুন পোলের নিচে গিয়ে একট একটা ৬০ টাকার বাংলা মারতে মারতে মনিরুল আসে।

- ভাই একা একা খাচ্ছিস? ডাকলিনি?

- আরে দোস্তো সবে এয়েচি। আর মনটা  ঠিক নেই ।

মনিরুল কে বিধানের পুরো  কেসটা বলে। মনিরুল বলে –চ জোহরের নামাজটা পড়ে আসি

ইলিয়াস- না, মাল খেয়ে যাবুনি ওদিকে

মনি- আরে চ, গোসল করে দাঁত মেজে চ, হুজুরের সাথে কতা হবে।ওখানে সলমান যদি আসে ত ওর সাথেও কথা হবে।

দিলশাদ ইঞ্জিন ভ্যানে জ্বালানী কাঠ নিয়ে চলেছে চড়িয়াল মসজিদের দিকে। মাঝ খানে একটু মাল টানার ইচ্ছেয় এই বাংলার ঠেকে নামে, ইলিয়াস শুঢোয়-৩০ মন কাঠ নিসচিন্তিপুর ডেলিভারি করতে কত লিবি?

-কাঠ কুথা?

-তুই মাল গস্ত করে ডেলিভারি দে দিবি

-আরে সব হরজোয়ালি মাল, ভাল মাল কুথা?

-আরে ওই দে না, বড় বি্টিটার কলে দুটো বাচ্চা, জামাই কেরালায়, কাল ফোন করে কাঠের তরে বলছিল।

-বেশ দুব, টাকা দে, মাল ধর ১৬০টাকার, ডেলিভারি ৪০০।

-বাপ এখন পুরো দিতে পারবুনি, ২০০ দিচ্চি, তাই লে বাপ

-হবেনে মালের টাকা পুরো দিতি হবে আর ডেলিভারির অন্তত হাফ টাকা

-আড়াইসো লে বাপ, অমন করিসনি

দিলশাদ রাজই হয়। মনিরুল বলে –চ, গোসল করে আসি

ইলিয়াস –না যাবুনি বললাম ত, সলমানের ঘর পানে চ

মনিরুল- ওকে এখন সেঞ্চুরি ক্লাবের সামনে পাবি

-চ দিকি, ভ্যানে বস

সেঞ্চুরির সামনে সলমান তার নতুন কেনা লাল সুইফট ডিসায়ারে হাত বোলাচ্ছিল বোউদি ফিলিং নিয়ে, সকালে মিঠে রোদে সান গ্লাস আর সাদা হুডিতে নিজেকে সত্যি সলমান খান আর গাড়িটা ক্যাটরিনা… হঠাৎ ইলিয়াস সামনে আশায় ভাব কেটে যায়, বিরক্তি চেপে বলে- কিরে কি দরকার?

ইলিয়াস সবে বলতে শুরু করেছে এমন সময়, বিশু এসে বুলেট থেকে নেমে দাঁড়ায়। সলমানের আসল বাড়ি বিশালক্ষীতলার পরের স্টপ গজায়, বিশু স্কুলের বন্ধু। প্লাস সলমান ওদিকে একটা ডাকাতির কেসে যখন ফেঁসেছিল তখন বিশুই ত…

সলমান ক্থা না শুনে বিশুর দিকে তাকাতেই বলে—চ রামনগরে একজন একটা বাড়ি বিক্রি করবে, পজিশন ভালো আছে, তবে ১২/১৩ ছটাক জমির উপর একটাই ঘর ,পায়খানা  বাথরুম, উপরে একটা ঘর আছে। ১৮লাখ বলছে। লোকটার প্রচুর লোন। মার্চের মধ্যে মেটাতে হবেই। বাড়ি ক্যাস দিলেই ছেড়ে দেবে।

সলমান, ইলিয়াসকে বলে- ঈশার নামাজের সময় মসজিদে আসিস।

বলেই বিশুকে গাড়িতে তুলে স্টার্ট দেয়।

বিধান, মাস্টারের ট্রিপ টা করে, মাঠপুকুরে ডিম পৌঁছে দেওয়ার একটা ট্রিপ মেরে এসে, বাজারে ঢোকে। পুই মিটুলি আর চিংড়ি কিনে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। বউকে বলে- রেডি  কর চান টা সেরে আসতিচি। পুকুর ধারে যেতে যেতে কোঁচর থেকে নিব টা বার করে দু ঢোকে র মেরে দেয়। পুকুর পাড়ে ফনটে বসে আছে। ওকে দেখে বলে- হারামীরা দিদির জমানায় এত বেড়েছে…

ফনটে বলে- অযোধ্যা যাবি?

বিধান- যেতে ত মন করে কিন্তুক…

ফনটে-১৬০০, যাওয়া আসা থাকা খাওয়া

বিধান হিসেব করে, দুজনের ৩২০০, ছেলে এদিকে থাকবে, যাবে বলে মনে হয় না। মাস্টারকে বললে কি হাজার দুই হবে না? বাকি নিজের ভান্ডারে আছে…

বউ ওর ভাত বেড়ে নিজের টাও বাড়তে থাকে। বিধান সাইড থেকে বউ এর নিটোল পাছার সাইড দেখতে দেখতে  পুই মিটুলি-চিংড়ি দিয়ে ভাত মাখিয়ে বলে- তুই অযোধ্যা যাবি?

বউ গালে টোল ফেলে হেসে বলে-নে গেলে যাবুনি কেন?

 

 

 

 

  •  

 

 

 

 

 

 

 

0 Comments
Leave a reply