হাল আমলের কুসংস্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো এই যে তথ্য দিয়েই বাস্তবতাকে ধরা যায়। সুকুমার রায়-এর ‘আবোল তাবোল’-এ ‘ছায়াবাজি’ ছড়াটার কথা একবার মনে করুন: ‘আজগুবি নয়, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা---/ ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যথা!’ তো সেই ছায়াবাজ ওস্তাদ বিবিধ ছায়া--- রোদের ছায়া, চাঁদের ছায়া, পাৎলা ছায়া, ফোকলা ছায়া, নিমের ছায়া, ঝিঙের ছায়া, আমড়া গাছের নোংরা ছায়া, এমনকি ব্লটিং পেপার দিয়ে শুষে আনা মৌয়া গাছের মিষ্টি ছায়া--- সংগ্রহ করে তা দিয়ে সর্বরোগহর ওষুধ বানাতো: ‘পাক্কা নতুন টাটকা ওষুধ এক্কেবারে দিশি---/ দাম করেছি সস্তা বড়, চোদ্দ আনা শিশি।’ আমাদের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-মহলে ছায়াবাজি করে বেড়ান বিবিধ তথ্যসংগ্রাহকরা। ব্ল্যাকহোল থেকে ম্যানহোল, ওজোন হোল থেকে পশ্চাদ্দেশের হোল, সামুদ্রিক জলের স্তর থেকে বিটকেল মনের স্তর--- যা কিছু ভাবা যায়, এমনকি ভাবা যায়ও না, সবকিছু নিয়েই হালনাগাদ তথ্য হাজির করার জাদুকরী ক্ষমতা আমাদের বর্তমান জ্ঞানোৎপাদনব্যবস্থা আয়ত্ত করে ফেলেছে; আর অঙ্কের নিয়মে ফেলে, কাটাছেঁড়া করে, মনোহারী মডেলে ঠেসেঠুসে ভরে দিব্যি নানা রোগনির্ণয় ও উপশমের বিধান চোদ্দ-আনা-শিশিতে ভরে বিক্রিও হয়ে চলেছে। সুকুমার রায়ের ওস্তাদ ছায়াবাজ ব্লটিং পেপার, ঝুড়ি, ইত্যাদি প্রাগাধুনিক হাতিয়ার দিয়ে ছায়া ধরে বেড়াতো বলে আমাদের তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসির খোরাক হয়, কিন্তু হাল আমলের তথ্যবাজরা কম্পিউটার, বিগ ডাটা অ্যানালিটিকস, হরেক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ইত্যাদি উত্তরাধুনিক ব্রক্ষ্মাস্ত্র প্রয়োগে তথ্য শিকার করেন বলে তাঁদের সম্ভ্রম করাই এখন দস্তুর। তাঁদের মতো ছায়া, থুড়ি, তথ্য সাজিয়ে ‘বাস্তবতা’-কে হাজির না করতে পারলে তা বাস্তবতা-ই নয়; আর ‘রাম ঘটাঘট ঘ্যাচাং ঘ্যাঁচ, তথ্যে কাটে তথ্যের প্যাঁচ’ তরীকায় বক্তব্য প্রতিপাদন করতে না পারলে তা কোনো বক্তব্যই নয়। এই যেমন ধরুন: আমি যদি বলি, শহরের বাতাসে নিশ্বাস নিতেই আমার এখন ভয় হয়, আপনি ভাববেন আমি কাব্যি করছি আর কাব্যরস মাপার শিশি-বোতলে ঢেলেঢুলে কথার অর্থ বের করতে গিয়ে কথাটাকেই অর্থহীন করে দেবেন; কিন্তু যদি বলি আমার শহরে বাতাসে পি এম টু পয়েন্ট ফাইভ লেভেল হলো এতো, তখন আপনি বলবেন যে ব্যাটা এবার বায়ুদূষণ নিয়ে চিন্তিত হয়েছে। পাহাড়ি নদীর পাশে পুরুষানুক্রমে বাস করে আসা বাসিন্দারা যদি বলে যে তাদের নদীতে যক্ষ রাজার পুরীর মতো বিশাল বাঁধ বানানো যাবে না কারণ এই নদী তাদের মায়ের মতো, জীবনদাত্রী দেবীর মতো, আপনারা সেসবকে পচা আবেগ বা অন্ধ সংস্কার বলে ঝেঁটিয়ে ফেলার আঁস্তাকুড় খুঁজবেন; অথচ বৈজ্ঞানিক মডেল বানিয়ে বাঁধের জন্য স্বল্পমেয়াদে ও দীর্ঘমেয়াদে হড়পা বান ও ভূমিধ্বসের সম্ভাবনা কী হতে পারে তা সংখ্যাতত্ত্ব-লেখচিত্র সহযোগে হাজির করতে পারলে তবেই আপনাদের বৈজ্ঞানিক মন নিয়ে তা বিচার করতে বসবেন। এমন উদাহরণ গাদা গাদা দেওয়া যায়, তবে উদাহরণের গাদা তৈরি করার উৎসাহ আমার নেই। এই দুটো উদাহরণ থেকেই নিঙড়ে এনে কিছু কথা বলায় বরং আমি উৎসাহী।
প্রথম কথাটা হলো, এই আপনারা যারা প্রযুক্তিকুশলী/জ্ঞানকুশলী-রা পি এম টু পয়েন্ট ফাইভ দিয়ে বায়ুদূষণ বোঝেন, কম্পিউটার-প্রসূত মডেলের উপর মডেল চাপিয়ে ভূমিগঠনের ভারসাম্য বোঝেন, আপনাদের নিজেদের বোঝাবুজি ও জ্ঞান নিয়ে আপনাদের সীমাহীন দর্প ও নিশ্চয়তা আমাকে যারপরনাই স্তম্ভিত করে। যৎকিঞ্চিত আপনাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে আমি যতটা পরিচিত, তার সাপেক্ষেই আমার মনে হয় যে একটি বায়ুমণ্ডল বা একটি ভূমিব্যবস্থা যা যা কারণে প্রভাবিত হতে পারে সেগুলোকে আপনারা আপনাদের তথ্যভিত্তিক হিসাবনিকাশে এক একটা চল (variable) বলে গণ্য করে থাকেন, তাহলে আপনাদের চিন্তাকাঠামো অনুযায়ীই তো সব কটা চল চিহ্নিত না করা গেলে ব্যবস্থাটাকে সম্যকভাবে ধরা বা বোঝা যাবে না, ফলে নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্ত বা পূর্বাভাসও করা যাবে না। এখন একটা বায়ুমণ্ডল বা ভূমিব্যবস্থার মতো কোনো ব্যবস্থায় প্রভাবকারী হিসেবে কী কী চল কাজ করে তা কি সম্পূর্ণভাবে নির্ণয় করা সম্ভব? আপনাদের বিবিধ জ্ঞানপূর্ণ মডেলে চলের সংখ্যা ও রকমের যে বিবিধতা দেখা যায়, তা থেকেই আন্দাজ করা যায় যে ব্যাপারটা সহজ নয়, হয়তো বা অসম্ভবও। আর জ্ঞানতত্ত্বের দার্শনিক দিক থেকে দেখলে, বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কে সবকিছুই মানুষ জেনে যেতে পারে ও সেই জানার জোরে সবকিছুকে ইচ্ছানুযায়ী নিয়ন্ত্রণও করতে পারে, এই যে পূর্ণজ্ঞেয়বাদ-নির্ধারণবাদ-আধিপত্যবাদ-কে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি বলে মাথায় তুলে নিয়েছেন, সেই দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও প্রচুর প্রশ্ন আছে, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় দর্শনেই অজ্ঞেয়বাদ-অনির্ধারণবাদ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে (বৌদ্ধ দর্শনের অজ্ঞেয়বাদ, ফ্রেডরিখ নিৎশে-র দর্শন দুটো উদাহরণ, বড় বড় নামের তালিকা আর না-ই বা বানালাম), যা বলে যে মানুষের জ্ঞানের সীমা আছে, তা কখনোই সেই সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বপ্রকৃতিকে সম্পূর্ণত আয়ত্ত করতে পারে না, ইচ্ছানুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করতে পারা তো অনেক দূরের কথা। তাই নিজেদের জ্ঞান নিয়ে আপনাদের দর্প ও নিশ্চয়তা বেশ হাস্যকর। কেবল হাস্যকরই নয় তা বেশ ক্ষতিকরও বটে। পুরোটা বুঝে গেছেন এই দর্প নিয়ে আপনারা সমস্যা সমাধানের যেসব পথ বাতলান (যেমন বায়ুদূষণ রোধের কৌশল-প্রযুক্তি বা ভূমিব্যবস্থার স্থিতি বজায় রাখা বা ফিরিয়ে আনার কৌশল-প্রযুক্তি) তা হয় সেই সমস্যা-সমাধানে ব্যর্থ হয় (মুখে মুখোশ এঁটে বা বদ্ধ ঘরে বায়ু-প্রক্ষালক যন্ত্র লাগিয়ে বাতাসের বিষ হয়ে ওঠাকে থামানো যায় না, নানা প্রযুক্তিগত দাওয়াই প্রয়োগে প্রকৃতি নীলকণ্ঠ হয়ে উঠলেও পাহাড়ে ভূমিধ্বস ও হড়পা বান আরো ছড়িয়ে পড়তে থাকে) অথবা নতুন সমস্যার জন্ম দেয় (বায়ু-প্রক্ষালক যন্ত্র বদ্ধ ঘরের বায়ুতে সাময়িকভাবে দূষণ কমালেও, ঘরের বাইরের বায়ুকে আরো দূষিত করে তোলে, দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা বাড়িয়ে তোলে; শক্তি উৎপাদনের জন্য বাঁধের বিকল্প প্রযুক্তি ভিন্ন ক্ষেত্রে দূষণ ও ভারসাম্যহীনতা সূচিত করে)। আর তাছাড়া, এতোদিন ধরে প্রকৃতিকে মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী মানুষের কাজে লাগানোর অন্ধ লোভ ও দর্পে চালিত শিল্পায়ন-নগরায়ন-উন্নয়ন-এর জেরেই তো আজকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভেঙে পড়ছে, বিভিন্ন জীবপ্রজাতির জীবনধারণ-পরিবেশ ধ্বংস হয়ে তাদের বিলোপ ডেকে এনেছে। তাই বলছিলাম যে আপনাদের এই অতি-দর্পিত সবজান্তাপনা সাধারণভাবেই খুব ক্ষতিকর। আপনাদের ওই কম্পিউটার মডেল ও প্রযুক্তির বটিকাগুলো আপনারা মহৌষধ বলে বিক্রি করছেন, কিন্তু আমাদের পক্ষে তা বিষ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এবার দ্বিতীয় কথাটায় আসা যাক। আমি পি এম টু পয়েন্ট ফাইভ মাপি না, মাপার কোনো ইচ্ছাও আমার নেই। আমার জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি টের পাচ্ছি যে এই শহরের বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়াটাও ক্রমশ আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। পি এম টু পয়েন্ট ফাইভের সংখ্যারাশি দিয়ে নয়, আমি আমার চারদিকের মানুষের যাপন-অভিজ্ঞতা যে ভাষায় প্রকাশিত হয় সেই ভাষাতেই এই সমস্যাটিকে প্রকাশ করতে চাই এবং চারপাশের মানুষের অভিজ্ঞতা ও স্বজ্ঞা থেকে সোৎসারিত উদ্যোগের মধ্য দিয়ে এই সমস্যার মোকাবিলা করতে চাই। একই কথা সত্য পাহাড়ি নদীর ধারের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রেও। কিন্তু আপনারা, সমস্যাটির বর্ণনা বা সমস্যাটির সমাধানের চেষ্টা, দুটোর কোনোক্ষেত্রেই আমাদের এই যাপন-অভিজ্ঞতার ভাষা বা স্বজ্ঞাকে একটি প্রণিধানযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে মানবেন না। আপনাদের কাছে আপনাদের দেখা-ভাবা-করা-র উপায়গুলোই একমাত্র সঠিক দেখা-ভাবা-করা-র উপায়, বাকি সবই ভুল। কেবল ভুল নয়, সেগুলোকে দলে-পিষে ধ্বংস করে আপনাদের দেখা-ভাবা-করা-র উপায় চাপিয়ে না দিতে পারলে আপনারা শান্ত হতে পারেন না। তাই মুখোশ না পরে বা ঘরে বায়ু-প্রক্ষালন যন্ত্র না লাগিয়ে আমরা যদি কালো-ধোঁয়া-উগড়ানো ফ্যাক্টরি/ যানবাহনগুলোকে বন্ধ করার জন্য সদলবলে উদ্যোগ নিই, পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা যদি সদলবলে এসে বাঁধটি ভেঙে দেয়, আপনারা আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে দেখা-ভাবা-করা-র বিকল্প পথকে উন্মোচিত হতে দেখবেন না, বরং আপনারা আমাদের অপরাধী বলে চিহ্নিত করে জেলফাটকে পুরতে চাইবেন। ফলে আপনারা আমাদের নিজেদের মতো করে দেখা-ভাবা-করা-র অধিকারকে অস্বীকার করেন, আপনারা কেবল আপনাদের মতো তথ্যবাজ জ্ঞানোৎপাদনকারীদের দেখা-ভাবা-করা-র অধিকারকে স্বীকার করেন। তাই আপনারা নিজেদের নাম দিয়েছেন ‘বিশেষজ্ঞ’, আর বাকি আমরা সকলেই ‘অজ্ঞ’।
বেশ বুঝতে পারছি আপনারা বোধহয় আমাকে পাগল ঠাউরে বসেছেন, তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলছেন: ওরে মূর্খ, কারখানা-যানবাহন-বাঁধ আরো আরো করে না হলে তোর ঘরে ইলেকট্রিক বাতি জ্বলবে না, তোর মোবাইল ফোন কাজ করবে না, ব্যাঙ্ক-বাজার ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে যাবে, আর তুই কি গরুর গাড়ি চেপে যাতায়াত করবি? আপনাদের তাচ্ছিল্যে আমার কিছু যায় আসে না, আপনাদের শংসাপত্র নিয়ে রাজা-উজির হওয়ার কোনো বাসনা যে আমার নেই। বরং আপনাদের যে এই প্রশ্নটা অবধি ঠেলে আনতে পেরেছি তাতেই আমি খুশি। কারণ আপনাদের কুসংস্কার অনুযায়ী উষ্ণায়ন, বায়ুদূষণ, জলদূষণ ইত্যাদি সবকিছু সমস্যার সমাধান তো কেবল আপনাদের ওই জ্ঞানবিজ্ঞানের পেট থেকে ঠিকঠাক প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করে ফেলার মধ্যেই আছে, আপনাদের বিলাস-ব্যসন-ভোগ-এর চির-অতৃপ্ত তাড়না পৃথিবীটাকে লুটেপুটে নিঙড়ে ছিবড়ে করে দেবে আর আপনাদের প্রযুক্তি আবার নতুন লুটের ক্ষেত্র তৈরি করে দেবে! আপনাদের এই আজগুবি সায়েন্স-ফিকশন-এর ঘেরাটোপ থেকে তাচ্ছিল্যবর্ষণের হেতু হলেও মুহূর্তের জন্য বের করে আনতে পারাও তো কম কথা নয়! হ্যাঁ মহাশয়েরা, বিজলীবাতি-মোবাইল-ব্যাঙ্কবাজার-বুলেটট্রেন ছাড়াই বাঁচার কথা আমরা ভাবতে শুরু করেছি, আমরা বুঝতে পেরেছি যে প্রকৃতির বুকে ফুটে ওঠা পরিবেশগত সংকটের চিহ্নগুলো আমাদের জীবনযাপনের অসঙ্গতিকেই চিহ্নিত করছে। জীবনযাপনের অসঙ্গতি বলতে কী বলছি? বলছি যে মানুষ তো প্রকৃতিরই অংশ, তার অস্তিত্বও প্রকৃতির অন্য সবকিছুর সঙ্গে সঙ্গতিতে বাঁধা থাকার কথা, কিন্তু সেই মানুষ যদি নিজ জ্ঞান-বিজ্ঞানের দর্পে নিজ ভোগলালসাকে আকাশচুম্বী করে তুলে প্রকৃতির অন্যসবকিছুর সঙ্গে তার অস্তিত্বের ভারসাম্যের প্রশ্নটিকেই ভুলে যায়, প্রকৃতির অন্য প্রতিটি অংশের বৃদ্ধি-বিকাশ-পুনরুৎপাদনের সঙ্গে সমন্বয়ে নিজের বৃদ্ধি-বিকাশ-পুনরুৎপাদনকে না বাঁধে, তবে এই অসঙ্গতি ঘটে। বিজলীবাতি-মোবাইল-ব্যাঙ্কবাজার-বুলেটট্রেন-এর জমকে চোখ ঝলসিয়ে আমরা এই অসঙ্গতিটিকেই বাড়িয়ে নিয়ে চলেছি, বাস্তুতান্ত্রিক (ecological) সংকটও তাই চূড়ান্ত হয়ে উঠেছে। তাই, বাস্তুতান্ত্রিক সংকট সমাধানের প্রচেষ্টা কোনো প্রযুক্তির জাদুবিদ্যা আয়ত্ত করার সাধনা করে হবে না, আমাদের জীবনযাপনকে আবার প্রকৃতির বেঁধে দেওয়া সীমায় প্রকৃতির অন্যান্য অংশের সঙ্গে সুসঙ্গতিতে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর প্রকৃতির অংশ হিসেবে প্রকৃতির অন্যান্য অংশের সঙ্গে সঙ্গতিস্থাপনের বোধ আপনাদের নির্ধারণবাদী-আধিপত্যবাদী জ্ঞান-বিজ্ঞানে তেমন নেই, যতোটা আছে প্রকৃতিলগ্ন মানুষদের স্বজ্ঞা-কল্পনা-বিশ্বাসের পরম্পরায়। তথ্যে-ভরা চোদ্দ আনা শিশির বটিকা গলাধঃকরণ করে সেই বোধ আয়ত্ত হয় না, আপনাদের উন্নয়নের ধারার বিপরীতে উজান বেয়ে নতুন জীবনযাপন-অভ্যাস আয়ত্ত করার চেষ্টার মধ্য দিয়ে ক্রমশ সে বোধের দরজা খুলে যায়। তাই আমাদের পাগল বলুন আর মূর্খ বলুন, কী বা এসে যায়--- আমরা আপনাদের জ্ঞান চাই না, প্রযুক্তিও চাই না, আমরা আমাদের সমস্যার বোধগুলোকে জড়ো করে নতুন জীবনযাপন-অভ্যাস গড়ে তুলতে চাই। চোখ পাকিয়ে আমাদের মাথার ব্যামো দূর করে ‘শিক্ষিত-উন্নত’ করার জন্য লাঠি বাগিয়ে আর নাই বা এলেন!
৯/১২/২০২৫
10 December, 2025
যেহেতু আমরা কেউ রাষ্ট্রের বাইরে নই, বরঞ্চ রাষ্ট্রের অন্তর্গত, তারফলে এই বিরোধিতায় কিভাবে রাষ্ট্রকেও সামিল করা যায়, সেটা ভাবা এবং সেভাবে পথ নির্ণয় জরুরী। দীর্ঘ সময় এই প্রচেষ্টাগুলি সমস্তই প্রতিষ্ঠানকে অস্বীকার করেছে। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠান আমাদের সকলের মিলিত প্রয়াসে তৈরি, তাকে পুরোপুরি বিরোধিতা করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত তা ভাবা দরকার। সমাজঅস্তিত্বের প্রতিটি স্থানাঙ্ক বলতে এই প্রতিষ্ঠানও তার অন্তর্ভুক্ত। বরঞ্চ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরোধিতার প্রতি সংবেদনশীল ভুমিকার উপস্থিতি প্রয়োজন।