তখন ৪:৩০ টে বাজে। বজবজ জুটের সামনের খোলা চত্ত্বরে লকের ভীড় নেই। চা দোকান গুলোও বেবাক ফাঁকা। একটা চা দোকানে গিয়ে বসলাম । দাদা, দুটো চা দিন। দোকানি চা দিলেন, সিঙ্গারার আলু কষাচ্ছেন। আগে এই সময় তৈরী হয়ে যেত। ভাবলাম, কি জানি্ হয়ত ব্যবসা পাতির অবস্থা ভালো নয়। জিজ্ঞেস করি-ব্যবসা কেমন চলছে? উত্তর আসে-এই যেমন দেখছেন।
চা খেতে খেতে খেয়াল করি, কোনো একজন লেবারও চা দোকানে দাঁড়াচ্ছেন না। কারখানার ছোট গেট খোলা। সেখানে কেওজন প্রাইভেট সিকিউরিটি বসে। লেবাররা এসে সোজা ঢুকে যাচ্ছেন। কেউ দাঁড়াচ্ছে না। আগে ত জুটমিলের ভোঁ পড়লে তবে গেট খুলত পাশেই গেটের মুখে একজন ফিরিওলা টিভিএসের মোপেডের উপর রেখে পুরানো হাফ প্যান্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সেখানেও ভীড় নেই। একজন/দুজন এসে দেখছেন। জুটমিলের কাছের মসজিদ থেকে আজানের শব্দ ভেসে আসে।
আমরা একদম জুটমিলের গেটের মুখে বিড়ি সিগারেটের দোকানে গিয়ে সিগারেট কিনতে কিনতে একজন লেবার বিড়ি কিনতে এগিয়ে এসে বললেন-ভা্লো আছেন? মাথা নেড়ে বলি- কি অবস্থা? হালকা হাসেন। আবার জিজ্ঞেস করি-কোন ডিপার্টমেন্টে কাজ করছেন? বলেন ,অবস্থা একদম ভালো না। ইউনিয়ন একদম শেষ করে দিয়েছে। এযা ক্যান্সার রোগ দিয়েছে।জিজ্ঞেস করায় বললেন-কাজের চাপ খুব। আবার বলেন- ইউনিয়ন একদম শেষ করে দিয়েছে।
-ক শিফটে কাজ হচ্ছে?
-দুই শিফটি তে?
-সময় বাড়িয়েছে?
-না, সময় একই রেখেছে,আটঘন্টা। তবে কাজের জুলুম…একটু গ্যাপ নিয়ে বলেন-অঢেল
-পার্মানেন্ট কজন?
-প্রায় নেই বললেই চলে
-সব কন্ট্রাক্ট?
-প্রায় সব
-ইএস আই , পি এফ আছে?
-হ্যাঁ, আছে
বল্তে বলতে মিলের গেটের ভিতর অদৃশ্য হলেন
কিছু ইয়ং ছেলে মিলের সামনে এদিক সেদিক ঘুরে বেরাচ্ছে। শাসক দলের ঝান্ডা এদিক সেদিকে পোঁতা আছে। একজন ফিরিওলা ভ্যানে করে আম নিয়ে এসে দাঁড়ালেন। এককেজি ৫০টাকা। আমরা চুপচাপ বসে আছি একটা চা দোকানের পাশে। মিলের ভোঁ বাজল। ওয়ার্কাররা এক এক করে বেরোচ্ছেন। বেশীর ভাগ সাইকেল নিয়ে। ছেলে, কিছু মহিলারা বেরোলেন। হাত গুনতি ১০/১২ জন। আগে যেমন ছুটির আগে পরে চা দোকানে ওয়ার্কাররা দাঁড়াতেন, সামনের চত্ত্বরে জটলা হত সেসব কিছু নেই।
কি করব কোথায় যাব এই সব ভাবছি আর বসে আছি। কিছু ইয়ং ছেলের জটলা। জুট্মিলের গেট-এ এখন আর লোক ঢুকছে বেরোচ্ছে না। একটু দূরে কোথায় গান চলছে-হামকো তুমসে পেয়ার হ্যায় /জিয়া বেকরার হ্যায়/ আজা মেরী বুলবুল…।
ওখান থেকে আমরা বেড়িয়ে চলে আসি। গন্তব্য এই বজবজ জুটের রিটায়ার্ড এক ওয়ার্কারের বাড়ি।
২০১৪ নাগাদ রিটায়ারমেন্ট। পাওয়ার কথা ছিল ৩/৩লাখ ৭০ হাজার মত, কিন্তু হাতে দিয়েছিল ১লাখ টাকার মত। তারপর আবার মিলেই কন্ট্রাক্ট লেবার হিসেবে ছিলেন। যেহেতু অন্য লেবারদের দেনা পাওনা কেন দেওয়া হচ্ছে না, সেসব নিয়ে সরব হতেন তাই মিলের বাইরে করে দেওয়া হয় ২০১৫ নাগাদ।
তাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে হাঁক পারি। বৌদি বেরিয়ে আসেন। বলেন-ঘুমোচ্ছে।
-কি নাইট শিফট?
-হ্যাঁ
ভবেন দা উঠে আসেন ঘুম চোখে।
-নাইট ডিউটি করে এলাম আবার আজ নাইট আছে
-আপনার শরীর কেমন আছে?
-ওই চলছে
-আপনার গ্র্যাচুইটির ব্যাপারটা কি হোলো?
-বারুইপুরের কোর্ট রায় দিয়েছে , একেক জন একেক রকম পাবে
-আপনি কত পেলেন
-আটষট্টি হাজার ,মোট চার জন আমরা তাদের এই টাকা দিয়েছে। উকিল বলছে টাকা নিয়ে বাকি টাকার জন্য হাইকোর্ট করে দিতে। আমি আর যাই নি। এবারে গেলে হাইকোর্টের জন্য উকিলকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দিতে হত। একবার ত টাকা দিলাম, সে ত ঝেড়ে দিল।
-আপনার ভাই কি রিটায়ার হিয়ে গেছে?
-হ্যাঁ , ও আবার ওই পাশেই চা গোডাউনে কাজে ঢুকেছে
-মিলের অবস্থা কি?
-ভাল না। দুই শিফটি কাজ চলছে। নেতারা আর নেতার চামচেরা গুন্ডাগিরি দাদাগিরি দুটোই চালাচ্ছে।
-হ্যাঁ, আজ ত আমরা মিলের বাইরে গিয়ে বসেছিলাম। কেউ দাঁড়াল না দেখলাম
-কেউ কোণো ট্যাঁ ফোঁ করতে পারবে না। করলেই মারবে
-কে মারবে?
-ওই নেতারা, তাদের চামচেরা। একটু কথা বললে তাকে আর ঢুকতেই দেবে না মিলে
-নেতা মানে কি ‘টিএমসি’ নেতা?
-নামেই অন্য ইউনিয়ন আছে। কাজে কিছু নেই। ও সবই এক। নেতারা যা বলবে তাই ।
-আগে ত কাজ শেষ হলে বাইরে এসে একটু দাঁড়াত, আজ দেখলাম কেউ চাও খেলো না, দাঁড়ালোও না।
-কি করবে , পরিস্থিতির স্বীকার, একটু এদিক সেদিক হলেই মারবে। মাথা গুঁজে আসছে, কাজ করছে, আবার মাথা গুঁজে চলে যাচ্ছে। যদি কোনোদিন নেতারা বলে আজ মিটিং, গেটের সামনে দাঁড়াতে হবে ত দাঁড়াবে।
-এখন কন্ট্রাক্টর কারা? নেতারাই?
-কিছু নেতারা আছে, কিছু নেতার চামচারা আছে। বলবার ত কোনো লোক নেই। যা করছে ওরাই করছে। খালি চাকরি না করলে নয় তাই করতে হচ্ছে। কাজ ত করতে হবে, সে জন্য করা।
-এখন যারা কাজ করছে এদের মাইনে দাঁড়াচ্ছে কিরকম?
- ওই ডেইলি তিনশো টাকার মতো।
-তিরিশ দিন কাজ পায়?
- না না, কোম্পানিই তিরিশ দিন চলে না। নানান অজুহাতে মিল বন্ধ।
-সারা মাসে ক’দিন চলে?
-মেরে কেটে ২০ দিন
-তাঁর মানে একজন ওয়ার্কার সারা মাসে ৬০০০টাকার মত পায়?
-হ্যাঁ কমবেশি। লোক ওয়ান থার্ড হয়ে গেছে
-প্রোডাকশান কি কমেছে?
-প্রোডাকশান চার গুণ হয়েছে। এখন সব চায়না মেশিন। আমরা যখন ছিলাম তখন থেকেই ত আস্তে আস্তে পুরানো মেশিন গুলো পালটানো শুরু হয়েছিল। আর কাজের চাপ প্রচুর বেড়েছে। কোথাও এই সব নিয়ে বলা যাবে না। লোকের আওয়াজ বন্ধ করে দিয়েছে । জোর করে। প্রতিবাদী কথাবার্তা প্রত্যেকেরই আছে। কিন্তু বলা যাবে না। জবরদস্তি। করলে কর না করলে সর।
ভবেনদাকে যখন মিলের বাইরে করে দেওয়া হয় সেটা ২০১৫ সাল। একটা মেয়ের বিয়ে হয়েছে। দুটো মেয়ের বিয়ে তখনো বাকি। কাজে ঢোকেন সিকিউরিটি গার্ডের, আরতি নার্সিং হোমে। এখন হসপিটাল। নাম-কা-ওয়াস্তে সিকিউরিটি। যা বলবে সব করতে হবে। এই গত কয়েকবছরের মধ্যে একটা থেকে চারটে হোলো। যে ভাবে লোককে ঠকিয়ে পয়সা নেয় আমাদের দেখলে খারাপ লাগে।
-আপনি কাজে কবে ঢোকেন?
-২০১৬, জানুয়ারি মাসে ঢুকেছিলাম ৫০০০টাকায়। প্রতি বছর এপ্রিল মাসে ৫০০ করে বাড়ার কথা। একবছর ত লাভ হয়নি বলে একবার ত ৫০০র বদলে ২০০টাকা বাড়ালো। আরপর অনেক বলতে আর ২০০ টাকা দিল। এবার কারুর ৫০০, কারু হাজার বাড়ার কথা। কিন্তু এই দেখুন এ বছর এখনো বাড়েনি। এভাবে দু’মাসের টাকা ঝেড়ে দিতে পারলে ২০০ লোকের কত হয় দেখুন। মালিক আজ লন্ডন, কাল দুবাই ঘুরে চলেছে। এই ত দুবাই ঘরে এলো কয়েকদিন আগে। তারপর আবার গেলো ব্যাঙ্গালোর। হাঁটুর ট্রিট্মেন্ট করাতে।
-জিমস হসপিটালটা এদের?
-ওর বাবার। আর ওর বাবার এই আমতলা বজবজ, বাখরা, রায়পুরে কত জমি আছে তাই ত জানা নেই। ১০০০ কোটি টাকার উপর মালিক হয়ে বসে আছে।
-ডিউটি আওয়ারস কতক্ষণ?
-এ সবের কোন ঠিক নেই। ধরুন আপনার নাইট চলছে, সকালে একজন এল না, ম্যানেজমেন্ট বলল, ডে টা করে দিতে। দিলেন। তারপর আপনার নরমাল ডিউটি নাইট, আবার সকালে ফের ডিউটি পরতেও পারে।
- আপনি যখন মিলের বাইরে এলেন তখন কত টাকা পাওয়ার কথা?
-৪লাখ টাকা। কিন্তু দিয়েছিল ১,০৮,৭০০ টাকা। সেই সব নিয়ে কেস করলাম আমরা অনেকে।
-সে কেসের কি হোলো?
-আটকে থাকা টাকার জন্য আর তাঁর উপর জমা সুদের জন্য কেস করেছিলাম। বছর চারেক ঘুরে যে উকিল আমাদের হয়ে কম পয়সায় লড়ত, সে বলল, দেখুন কোম্পানি আপনাদের বিপক্ষে বিকাশ ভট্টাচার্য কে দাঁড় করাচ্ছে। ওর অনেক হাত, তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে গেলে ওর সাথে পাল্লা দিতে পারে এমন কাউকে দাঁড় করাতে হবে।
-বিকাশ ভট্টাচার্য মানে বাম নেতা?
-হ্যাঁ, উনি কোর্টে দাঁড়ালে জজ পর্যন্ত্য স্যার স্যার করে কথা বলে। আমাদের মামলাতে বিকাশ ভট্টাচার্য জজকে বলছেন যে, এই মামলাটা আপনার এই ভাবে দেখা উচিত। আর সেটা শুনে জজ মামলাটাকে স্ট্যাগারিং না কিসে একটা ফেলে দিলেন। হাজারটা মামলার পিছনে।
( প্রথম পুরো গ্রাচুইটির দাবিতে কেস করেন, মুরসালিন মোল্লা, জাকির আর আঙ্গুরা বিবি-এনার মৃত স্বামীর হয়ে- চার /সাড়ে চার বছর গ্রাচুইটি কোর্টে ঘুরে অর্ডার হয় শ্রমিকদের পক্ষে। গ্রাচুইটি কোর্ট শ্রমিকদের জানায়, কম্পানি যদি একমাসের মধ্যে এই টাকাটা না দেয় তাহলে সার্টিফিকেট দফতর আদায় করে দেবে। কম্পানি দিলো না। ফলে আবার সবাই ছুটলেন সার্টিফিকেট দফতরে। বছর দেড়েক সার্টিফিকেট দফতরে ঘোরার পর দফতরের বাবুরা বললেন, তারা সব অর্ডার কম্পানিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এবার কম্পানি টাকা দিয়ে দেবে। কিন্তু টাকা মিললো না। আবার ওয়ার্কাররা ছুটলেন হাইকোর্টে সার্টিফিকেট দফতরের নামে আদালত অবমাননার কেস করতে। হাইকোর্ট যখন শোকজ করল সার্টিফিকেট দফতরকে , তখন সার্টিফিকেট দফতর তড়িঘড়ি ওয়ার্কারদের বললো-, এসো টাকা নিয়ে যাও। কিন্তু হাতে যে টাকা পাওয়া গেলো, সেটা সুধু মুলটা , সুদ নয়।
এবার উকিল পরামর্শ দিলো, ফের হাইকোর্টে সুদ আদায়ের জন্য আলাদা মামলা করতে হবে। সেই মত আবার মামলা করা হোলো। দেখা গেল, কোম্পানি এবার তাঁর উকিল পাল্টেছে। কোম্পানির হয়ে হাইকোর্টে দাঁড়াল নামজাদা উকিল, বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। বিকাশ বাউ তিন চার বার অয়াপিয়ার করার পর মামলা কমল পিছোতে লাগলেন আর আইনের এক কোন ছুতোয় তিনটে মামলাকে স্ট্যাগারিং-এর সারিতে ফেলে দেওয়ার রায় বার করে নিলেন। এই সারিতে বহু বছর ধরে হাজার হাজার মামলা জমে আছে। সেই ভিড় ঢেলে, আজ অবদি ১২ বছর পরেও মামলা তিনটি হাইকোর্টে সওয়াল এর তালিকায় উঠতে পারেনি। মুরসালিন মোল্লা ও জাকির এর মধ্যে মারা গেছেন।
এর পর থেকে বিকাশ বাবু এবং তাঁর সহকারী বলাই বাবু হয়ে গেলেন কোম্পানির স্থায়ী উকিল। রিটায়ার শ্রমিকদের করা গ্র্যাচুইটির কেসে , গ্র্যাচুইটি কমিশনার যখনই শ্রমিকদের পক্ষে রায় দেয়, তখনই বিকাশ বাবুরা, সেই রায় পুন বিচারের জন্য বারুইপুরের রিজিওনাল লেবার কমিশনারের অফিসে ঢেলে দেয়। রিজিওনাল লেবার কমিশনার বহুদিন ঘোরানোর পর, সরাসরি শ্রমিকদের প্রস্তাব দেন, কোম্পানির সংগে সমঝোতা করে নেওয়ার। কেমন সমঝোতা? শ্রমিকদের তিনি বলেন যে- এরপর হাইকোর্টে কেস নিয়ে বহুঘুরতে হবে। অত হ্যাপা বুড়ো বয়েসে সামলানো যাবে না, খরচো হবে অনেক, তাঁর চেয়ে অর্ডার হয়া প্রাপ্য টাকার তিন ভাগের এক ভাগ কি চার ভাগের একভাগ নিয়ে, কেস ওখানেই মিটিয়ে ফেলতে।#১
অনেকেই মেনে নিলেও সাদ্দাম নামক একজন শ্রমিক মানতে চানই। তখন ওই লেবার কমিশনার কোনো যুক্তির ধার না ধেরে কোম্পানির পক্ষে রায় দিয়ে দিলেন-সাদ্দামের প্রাপ্য আর কিছুই নেই।
এই রায় দিলেন, করোনার লকদাউন শুরু হয়ার আগে আগে। তারপর এলো করোনা। ফলে সাদ্দাম এই রায় পুনঃবিচার করার আর্জি উকিলের কাছ থেকে লিখিয়ে নিয়ে গিয়েও দফতরে জমা দিতে পারলেন না। ফলে, হাইকোর্টেও তা চ্যালেঞ্জ করা গেল না।#২)
আমরা এই কথা বার্তা বলে বেরিয়ে একটি চায়ের দোকানে চা খেতে দাঁড়ালাম। কিছু মধ্য বয়স্ক লোক আড্ডা দিচ্ছেন। দুটি বছর ৩০/৩৫-এর যুবক বসে জুয়ার হিসেব করছেন। একজন খুব খুশি, কারন তিনি ১০০টাকা হারলেও তাঁর বিপক্ষ ২০০টাকা আজ খুইয়েছে।
ট্রেনে উঠি। আমার সহযাত্রী বসে তাঁর স্মার্ট ফোনে মোদীর ইলেকশন র্যালির বাগবাজারের রোড শো দেখছেন।
#১- নামজাদা উকিল সর্বহারা নেতা শ্রী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য মহাশয় কোম্পানির হয়ে নিযুক্ত হওয়ার পর, লেবার কোর্টে পাঠাতেন তাঁর জুনিয়ার শ্রী বলাই পাল কে। যেদিন মামলা সংক্রান্ত ব্যাপারে ডাক পড়ত, সেদিন বলাই বাবু, লেবার কমিশনারের সামনে গিয়ে বসতেন এবং সাংসারিক ভাল মন্দের খোঁজ খবর নিতেন। যখনই শ্রমিকদের পক্ষ হতে যিনি এই মামলাটায় থাকতেন, তিনি শ্রমিকদের মামলার বিষয় তুলতে চাইতেন, তাকে থামিয়ে বলা হত, ‘আরে অত তাড়াহুড়োর কি আছে? সব হবে হবে।‘ এই সব বলে আবার আরেকটা উপস্থিতির ডেট দেওয়া হত।
#২-যারা এই মামলায় শ্রমিকদের সাথে ছিলেন, তাদের এই মামলায় থাকা যে ভাবনা থেকে,সেটা হল- যদি শ্রমিকরা এই মামলাটায় নিজেদের দাবি আদায় করতে সক্ষম হন, তাহলে, কোম্পানির কাছে আর অন্য শ্রমিকদের কাছে সেটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এবং তখন এই সব অবসরকালীন দাবি দাওয়া আদায় করার জন্য আর কোর্টে ছুটতে হবে না। মিলেই শ্রমিকরা একসাথে জোট করে কতৃপক্ষকে বাধ্য করবেন।
-
-
11 June, 2024
মিলগুলো তৈরীই হয়েছে শ্রম শোষণের জন্য। এই মিলগুলো যাতে সেই কাজটা ঠিকঠাক করতে পারে, তাদের সহায়তার জন্যই আইন আদালত সরকারি দপ্তর। এগুলোকে কলিম খান বলেছিলেন 'উইপিং হোল'। উইপিং হোল আসলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংএর পরিভাষা। মাটি ধসে পড়া আটকানোর জন্য যে দেয়াল তোলা হয়, তাকে বলে রিটেইনিং ওয়াল, সেই ওয়ালে কিছু ফুটো রেখে দেওয়া হয়, যার মধ্য থেকে বৃষ্টির জল চুঁইয়ে বেরিয়ে আসতে পারে, না হলে ঐ জলের চাপে রিটেইনিং ওয়াল ভেঙে পড়ে যাবে। জল বেরোয়, তাই উইপিং হোল। শ্রম দপ্তর, আদালত এগুলো হচ্ছে ঐ উইপিং হোল, যে খানে শ্রমিকরা একটু কাঁদতে পারে। না হলে সিস্টেম ভেঙে পড়তে পারে। তাই এই প্রবন্ধে যা লেখা হয়েছে, সব স্বাভাবিক। এগুলোই সিস্টেম। এই সিস্টেমের ফাঁদে পা দিলে এগুলোই হবে। আমরা এই ব্যবস্থার বাইরে কারিগরি উৎপাদনের পক্ষে গলা ফাটাই এগুলো বুঝি বলেই।