বিজয় মিছিল

লিখেছেন:পার্থ কয়াল
শামীম আজ ঘুম থেকে দেরি করে উঠেই খবরটা পায়। তারাদের পুকুরে মাছ ভাসছে । ঘুম চোখে লুঙ্গি কষে বাঁধতে বাঁধতেই দৌড় লাগায়। তারপর?

 

 শামীম আজ একটু দেরি করে উঠেই খবরটা পায়। তারাদের পুকুরে মাছ ভাসছে । ঘুম চোখে লুঙ্গি কষে বাঁধতে বাঁধতেই দৌড় লাগায়। আমিনা বাইরে উঠান টুকু ঝাঁট দিয়ে জ্বালন গুছোচ্ছে। পাশে কালকে রাতে পার্টি অফিস থেকে আনা তেরপল। হকচকিয়ে তাকিয়ে থাকে সামিমের দিকে। শামীম যা ভেবেছিল ঠিক তাই । লোক গ্যাঞ্জাম। তার মধ্যেই কোঁচা মেরে নেমে পরে। একটা ৫০০ ওজনের কাতলা ভেসে উঠে খাবি খেতে শুরু করতেই সেটা ধরে সাইডে উঠে পরে।        

      কাল রাতেই সলিমুল বলে গিয়েছিল আজ বিজয় মিছিল হবে। মোদী হেরেছে, দিদি জিতেছে। মালের বন্দোবস্ত থাকবে। খেলা হবে। অবশ্যি কয়েকদিন ধরে ভোট মিটিং এই সব লেগেই আছে...আর ওসব কি মদ-মাংস ছাড়া...আমিনা একটু খিঁচখিঁচ করছিল। কয়দিন ভোট ভোট করে কাজ কম । এমনিতেই বাজার মন্দা । মেয়েটার খুক্ষুকে কাশি। তার মধ্যে যুগিমেশিন টাও চলছে না। মোটর টা খারাপ হয়েছে। সামনে বকরী ইদ । তা যাক শামিম চাইলেই ত আর হবে না। অত সাতসতেরো না ভাবাই ভাল। বাড়ি ফিরে মাছটা দিতেই আমিনা অবাক হয়। ভিজে নুঙ্গি দেখে বুঝতে পারে। খবরটা আমিনারও কানে গেছে। বলে, ঐ বিষ দেওয়া মাছ খাবুনি। শামীম এটা খেয়াল করেছে, এই মাগিগুলোর লক্ষীর ভান্ডার হওয়ার পর থেকেই.....শামিম একটা ঝাঁঝ দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে মকামতলা মোরের মাথায়। ততক্ষনে সাইকেল ভ্যানে বাঁশ লাগিয়ে মাথায় চোঙ্গা বাধা কমপ্লিট।

  সলিমুল লিড দিচ্ছে। সাদা চাইনিজ কাট জামা, কটন প্যান্ট, সান গ্লাস। হাঁক দিল- ঐ শামিম, তুই এখন এলি? ব্যাটারিটা ভ্যানে তোল। শামীম ত এক পায়ে খাড়া। ভোটের আগের রাতেই শামিমের কাছে খবর ছিল যে বুথ প্রতি পেটি পেটি মাল আসবে আর তেরপল। শামীম সেদিন সারাদিন সলিমুলের পায়ে পায়ে ঘুরেছে। তাঁর ফল অবশ্যি পেয়েছে। আরেকটা কারন আছে, সলিমুল লেবার কন্ট্রাক্টর। নুলো মজিদকে ও একটা গাড়ি চালানোর কাজ দিয়েছে। মজিদের তাতে হেবি রোয়াব । সামিমের যদি...….সলিমুল বলে রেখেছিল, রাতে মাল আর তেরপল কখন ঢুকবে। মাল আসতেই সলিমুল ওদের দু’তিন জনকে ডেকে আনে। শামীম এইটার জন্যই অপেক্ষা করছিল।। কাল রাতে সলিমুলের জন্যই মালের পেটি থেকে একটা বাংলা আলাদা করে এক্সট্রা পেয়েছিল আর সাথে বাড়ির জন্য তেরপল। আর সাথে আরেকটা খবর পেয়েছে। আজ বাদামতলা, মানে পাশের অঞ্চলে আজ রাতে খাওয়ানো। ওদের অঞ্চল পার্টি অফিস আজ সকাল থেকেই সাজানো হচ্ছে। কাল, কেলোর সাথে মাল খেতে যখন বসেছিল,তখন কেলোই বলছিল, এবার থেকে বাদামতলার প্রতি বুথে দু হপ্তা অন্তর একবার করে মুড়ি মাংসের আসর বসবে। তখন এটাও ভেবে রেখেছে, সলিমুল কে বলবে ,শামীমদের পাড়ায় এই রকম যদি কিছু করা যায়। 

   সেই বাংলাটা গজু কে দিয়ে ডিয়ার লটারি টিকিট কিনেছে। আজ একটু এখানে নেচে নিয়ে সাইড কাটতে হবে। সলিমুল আবার হাঁক পারে- ও মাস্টার দূরে দাঁড়িয়ে কেন? আজ মকামতলা প্রাইমারি ছুটি করিয়ে সলিমুল, নেত্য মাস্টার কে নিয়ে এসেছে। মাস্টার শালা আগের ইলেকশনে বিজেপির দিকে ছিল। এখনও আছে। তবে চেপে গেছে। নজু, গুপে, আস্ফাক ত মাথায় ঘাশফুল ফেট্টি বেঁধে সকাল থেকেই পটকা ছাড়ছে। কেলোও নাচছে, খালি গা, কালো কুষ্টি চেহারা, তার মধ্যে মুখে এক গাল দাড়ি, পোঁদ থেকে প্যান্ট নেমে যাচ্ছে, ঘুনসী দড়িতে আটকাচ্ছে না, মাথায় ঘাশফুল পতাকা ফেট্টি করে বেঁধেছে। কাল মাল খেয়ে আউট হয়ে সামিমের লুঙ্গি কোথায় ছিল খুঁজে পায়নি। তখন কেলোর পরনের গামছা খানা নিয়ে চলে এসেছিল। কেলো মালের ঘোরে গামছা টানার চেষ্টা করতেই এক থাপ্পড় দিয়ে শামীম বলে-খলনায়ক হু ম্যায়। ব্যাস শালা চুপ মেরে গেছিল। তবে কেলোকে কাল মারাটা ঠিক হয়নি। ও কখনো একা মাল খায় না। আর কাল ,টক দইটা কেলোই কিনে এনেছিল।দই দিয়ে মাল খাওয়াটা হেব্বি জমেছিল।

   থানার মেজবাবু একবার এসে ঘুরে গেছে। আজ শালা কিছু বললে....পাচু বাজনদার ওর পুরানো ইয়ামাহা সিন্থেসাইজারে সুর তোলে- প্যায়ার বিনা চ্যায়েন কাহা রে... পটকা ফাটে, সামনে ঘাশফুল ঝান্ডা হাতে সুলেমান, পাশে মাস্টার, শামীম হালকা চড়িয়ে নাচতে নাচতে মাস্টারের কাঁধে হাত দেয়। মাস্টার ভ্যাবাচাকা। আজ কেউ কিছু বলতে পারবে না। শালা মাস্টার স্কুলে অঙ্ক পারে নি বলে কত মেরেছে। আজ তার হিসেব তুলে নেবে।  

      শামীম নাচতে নাচতে সাইড হয়ে যায় বটতলার কাছে । কেলোর গামছায় ঘাম মোছে।গজু, বটতলায় বসে আছে। লুঙ্গির কোঁচড় থেকে টিকিট গুলো বার করে মেলায়। এই কেলো করেছে, মনে হচ্ছে এককোটি লেগে গেল। সালা, চোখ কচলে আরেক বার দেখে সাইড নেয় । গজু ঠিক খেয়াল করে ওর পিছু নেয় - কি দোস্ত লেগে গেছে নাকি? বলবে কি বলবে না করে টিকিটটা এগিয়ে দেয়। গজু দেখে বলে- দূর মারা, তোর ০ র জায়গায় সাত আর ৭ এর জায়গায় ০ হলে এককোটি বাঁধা ছিল

1 Comments
  • avatar
    ,Sanjay ghosh

    15 June, 2024

    দারুন সমাজ বিশ্লেষণ গল্পের মধ্য দিয়েই।

Leave a reply